শ্যামনগরে কুমারদের মানবতার জীবন

দেশসেবা দেশসেবা

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১২:২৯ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১৪, ২০২৫
মোঃ আরিফুজ্জামান আরিফ । । প্রাচীন কাল থেকে কুমার সম্প্রদায়ের কাজ মাটি দিয়ে। যা বলা হয় মৃৎশিল্প। কালের পরিবর্তনে বর্তমানে বাজারের সিলভার, এলমোনিয়াম ও প্লাস্টিক সামগ্রীর দাপটে বাংলার ঐতিহ্যবাহী  মৃৎশিল্পীদের মাটি দিয়ে  তৈরি করা জিনিসপত্র প্রায় বিলুপ্তির পথে ।কুমাররা প্রথমে ভূমি থেকে মাটি সংগ্রহ করে পরে  হাত ও পায়ের সাহায্যে কাঠের  পিটনা দিয়ে থেতলে পাত্র তৈরির উপযুক্ত করে তোলে ।  মাটিকে প্রস্তত করে  পাত্রের আকার ও আকৃতি সম্পন্ন করে । তারপর সূর্যের তাপে পাত্রটিকে শুকানো এবং সবশেষে তা আগুনে পোড়[ানো ও প্রয়োজনে তাতে রং লাগানো হয় । কুমার সম্প্রদায়েরা মনের মাধুরী মিশিয়ে তৈরি করে বিভিন্ন ধরনের মাটির পাত্র।তারমধ্যে মাটির তৈরি জিনিসপত্র আগের মতো ব্যবহার করছে না মানুষ।প্লাস্টিক,এলোনিয়াাম, সিলভারের বাহারি রকমের অত্যাধুনিক জিনিস বাজারে আসার কারণে মাটির তৈরি জিনিসপত্র দিন দিন ক্রেতাদের আগ্রহ  কমে যাচ্ছে।এ কারণে কুমারদের জীবনে নেমে এসেছে চরম দুর্দিন। শ্যামনগর উপজেলা  কৈখালী,নুরনগর,কাশিমাড়ী,নওয়াবেকী,খানপুর, শংকরকাটির মৃৎশিল্পীরা এখন বেকার হয়ে পড়েছে। তাদের ঘরে এখন চলছে হাহাকার। সামান্য আয়ে চলছে না তাদের সংসার।কুমারদের মাটি দিয়ে তৈরি  জিনিস  বর্তমানে প্লাস্টিকের, সিলভার ও এলমোনিয়াম  তৈরি সামগ্রীর সাথে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পারার  কারণে অনেকেই বাপ-দাদার পেশা ছেড়ে বাধ্য হয়ে চলে যাচ্ছে অন্য পেশায়। এ পেশার সাথে জড়িত রয়েছে উপজেলা ৬গ্রামের   প্রায় ৯ শতাধিক   কুমার পরিবার। সরেজমিন দেখা গেছে কুমারপাড়ায় কুমার-কুমারী ও তাদের পরিবার-পরিজনের দুঃখের  করুন কাহিনী।কুমারদের  অভাব অনটনের কারণে তাদের  ছেলে-মেয়েদের পড়ালেখা করাতে হিমশিম খাচ্ছে । আবার অনেকের অভাবের কারণে লেখা পড়া বন্ধ করে দিয়েছে।নুরনগর গ্রামের  মাধুরি রানী মাটি দিয়ে বিভিন্ন সামগ্রী তৈরির কাজে  ফাঁকে  বলছিলেন  এখন আর আগের মতো আমাগো কুমার পাড়ার আয় রোজগার নেই। আগে আমরা চরকা দিয়ে বিভিন্ন ধরনের জিনিস তৈরি করতাম। কিন্তু এখন চরকা ব্যবহার করা হয় না। কারণ চরকা দিয়ে জিনিসপত্র তৈরি করে ভালো দাম পাওয়া যায় না।তাছাড়া এখন আমাদের মাটি ও লাকড়ি কিনে আনতে  হয়। কোনরকম খেয়ে না খেয়ে বেঁচে আছি।সাবিত্র পাল বলেন সামান্য আয়ে সংসার টিকিয়ে রাখা খুব কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমাদের তৈরি জিনিস আগের মত মানুষ ব্যবহার করে না। তিনি আরো বলেন আমার এক মেয়ে দশম শ্রেণীতে পড়ছে লেখাপড়াার খরচ যোগাতে খুব কষ্ট হচ্ছে ভিটা  ছাড়া  আর কোনো জমি নেই । আমি ও আমার স্বামী  ১৫-১৬ বছর যাবত এ কাজ করে কোন রকম সংসার চালাচ্ছি  ।আমাদের দিন আনতে পান্তা ফুরায় কোন রকম বেঁচে আছি। আমাদের যদি সরকার একটু সাহায্য সহযোগিতা করতো তাহলে আমাদের এই পেশাটা আমরা ধরে রাখতে পারতাম।সমীর পাল বলেন আমাদের বাপ দাদার ঐতিহ্যবাহী পেশা ছেড়ে আমি এখন মোটর গ্যারেজে কাজ করি। কারণ বাপ-দাদার পেশায় আগের মত আয় রোজগার হয় না।মাটির কলস হাঁড়ি-পাতিল, ব্যাংক পাত্র,বাচ্চাদের খেলনা , দইয়ের পাতিল, মুটকি, গুড়ের ভাড়,ভাপা পিঠার পাতিল, ফুলের টপ, এসব জিনিসপত্র এখন আগের মত মানুষ ব্যবহার করে না। তাই বাধ্য হয়ে এই পেশা ছেড়ে আমি এখন গ্যারেজে কাজ করে সংসার চালাই ।স্বরসতীকর্মকার বলেন আমাদের মৃৎশিল্প প্রাচীনকাল ঐতিহ্য রয়েছে । তিনি আরো বলেন এলমোনিয়াম, প্লাস্টিক, সিলভার এসব জিনিসের কারণে। মাটির জিনিসপত্র এখন আগের মতো ব্যবহার হচ্ছে না। এ পেশা ছেড়ে অনেকেই  আমার মত  অন্য পেশায় চলে গেছে। আমি এখন মোবাইলে ফ্লেক্সিলোড, বিকাশ, মোবাইলের বিভিন্ন উপকরণ বিক্রি করে স্ত্রী সন্তান নিয়ে বেঁচে আছি।