এলাকাবাসীর অশ্রুসিক্ত বিদায়: না ফেরার দেশে বীর মুক্তিযোদ্ধা চেয়ারম্যান মুকুল খান

দেশসেবা দেশসেবা

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ৪:০৭ অপরাহ্ণ, আগস্ট ২, ২০২৫

শেখ ফরিদ আহমেদ ।।

গোপালগঞ্জের ইতিহাস ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবহ এক বর্ণাঢ্য অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি ঘটলো। সদর উপজেলার মাঝিগাতি ইউনিয়নের তিনবারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান, বঙ্গবন্ধু কলেজের সাবেক ভিপি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. হাফিজুর রহমান খান (মুকুল খান) আর নেই। গতকাল রাতে ঢাকার ইবনে সিনা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
তার মৃত্যু সংবাদ মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে গোটা গোপালগঞ্জ জুড়ে। শোকবিহ্বল হয়ে পড়ে সর্বস্তরের মানুষ। রাজনীতি, সমাজ, খেলাধুলা—সব অঙ্গনে সক্রিয় এই নির্লোভ নেতার মৃত্যুকে এলাকাবাসী একটি যুগের অবসান হিসেবে দেখছেন।
বর্ণাঢ্য জীবনযাত্রার অধিকারী এই মানুষটি বঙ্গবন্ধু কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি ছিলেন। পাশাপাশি তিনি গোপালগঞ্জ জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাবেক সাধারণ সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। ব্যবসায়িক ক্ষেত্রেও ছিলেন সক্রিয়—তিনি ছিলেন ‘সোয়ান ফোম’-এর প্রতিষ্ঠাতা ও সত্ত্বাধিকারী খবির খানের জেষ্ঠ ভ্রাতা । তার নেতৃত্বাধীন মাঝিগাতি ইউনিয়নে একাধিকবার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে জনসেবায় নিজেকে নিবেদিত করেন। সরলতা, সদালাপিতা ও মানবিকতা দিয়ে তিনি মানুষের হৃদয় জয় করেছিলেন।
মরহুমের জানাজার নামাজ ১ আগস্ট শুক্রবার আছরের নামাজ শেষে তার নিজ গ্রাম মাঝিগাতি হাইস্কুল মাঠে অনুষ্ঠিত হয়। প্রবল বর্ষণের মাঝেও হাজার হাজার মানুষ জানাজায় অংশ নেন।
জানাজার আগে মরদেহ জাতীয় পতাকায় আচ্ছাদিত করে গার্ড অব অনার প্রদান করে গোপালগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রকিবুল হাসানের নেতৃত্বে পুলিশের একটি চৌকস দল এই রাষ্ট্রীয় সম্মাননা প্রদান করে।
জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের পক্ষ থেকে ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ আলমগীর হোসেন ফুলেল শ্রদ্ধা জানান।
জানাজার পূর্বে মরহুমের ছোট ভাই মো. খবির খান সবার কাছে তার ভাইয়ের পক্ষ থেকে ক্ষমা চেয়ে বক্তব্য দেন। তার বড় ছেলে ও গোপালগঞ্জ জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য আরমান হাফিজ খান বলেন,“আমার বাবার কথা, আচরণে কেউ কষ্ট পেয়ে থাকলে দয়া করে ক্ষমা করে দেবেন।”
জানাজায় গোপালগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা শরীফ রফিকুজ্জামান, বিএনপির সাবেক সভাপতি ও জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এম এইচ খান মঞ্জু, জামায়াতে ইসলামীর গোপালগঞ্জ জেলার সাবেক আমির অধ্যক্ষ আজমল সরদারসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, সমাজসেবক, শিক্ষক, মুক্তিযোদ্ধা ও সর্বস্তরের মানুষ অংশ নেন।
জানাজা শেষে তাঁর মরদেহ পারিবারিক কবরস্থান—মাঝিগাতি ইউনিয়নের কোনাগ্রামে দাফন করা হয়।
জনবান্ধব নেতৃত্বের প্রতীক ছিলেন স্থানীয়দের মতে, চেয়ারম্যান মুকুল খান ছিলেন মানুষের সুখ-দুঃখের সাথী। অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়ানো, বিনা দ্বিধায় এলাকার উন্নয়ন নিয়ে কাজ করা, কারও বিপদে সাড়া দেওয়া—এসব ছিল তার প্রতিদিনের অভ্যাস।
একজন জনবান্ধব, নির্লোভ ও বিশ্বাসযোগ্য জনপ্রতিনিধি হিসেবে তিনি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন।
মুকুল খান মৃত্যুকালে দুই ছেলে, ছয় কন্যা, নাতি-নাতনিসহ অসংখ্য আত্মীয়স্বজন ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। তার ভাই মো. খবির খানও একজন পরিচিত ব্যবসায়ী ও সমাজসেবক।