ইউপি সদস্য’র বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি আত্মসাতের অভিযোগ

দেশসেবা দেশসেবা

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ৫:০০ অপরাহ্ণ, আগস্ট ৩, ২০২৫
বরগুনার তালতলী উপজেলার কড়াইবাড়িয়া ইউনিয়নের ইউপি সদস্য মো. ইসহাক মাঝির বিরুদ্ধে বয়স জালিয়াতি করে মুক্তিযোদ্ধা সনদ গ্রহণ, জাল সনদপত্রে রাষ্ট্রীয় সুবিধা গ্রহণ ও ভূমি জালিয়াতির গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। উপজেলা প্রশাসনের তদন্তে একাধিক অনিয়মের প্রমাণ মিললেও আওয়ামী ঘরানার এই জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
জানা যায়, মৃত আব্দুল কাদের মাঝির ছেলে মো. ইসহাক মাঝি ১৯৬৬ সালের ৭ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি পেতে তিনি নিজের জন্মসাল পরিবর্তন করে ১৯৫৫ সালের ৭ জানুয়ারি দেখান। ফলে জন্ম তারিখ জালিয়াতির মাধ্যমে বড় ভাই ইব্রাহিম মাঝির (জন্ম ১৯৬২) থেকেও বয়সে ‘বড়’ হয়ে যান। এই ভুয়া জন্মতারিখ ও একটি জাল শিক্ষা সনদের ভিত্তিতে ২০২১ সালের ১৮ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রকাশিত গেজেটে তাকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এ নিয়ে এলাকায় ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হলে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে  ২০২২ সালের ৩ মার্চ তালতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসারের তদন্তে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের স্বাক্ষর, সিল ও মনোগ্রাম জাল করার বিষয়টি প্রমাণিত হয়। ইসহাক মাঝির দেওয়া সনদে উল্লেখ রয়েছে তিনি ১৯৬৯ সালে এম এম আলীর বন্দর মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে অষ্টম শ্রেণি পাস করেন। অথচ বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৭২ সালে। বর্তমানে তিনি মুক্তিযোদ্ধা ভাতা ছাড়াও বিভিন্ন সরকারি ভাতা ও সুযোগ-সুবিধা নিয়মিত ভোগ করছেন। এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে স্থানীয় বাসিন্দা মোঃ জালাল গাজী জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল জামুকা’য় অভিযোগ করেন।সেই  অভিযোগের প্রেক্ষিতে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা)   ২১ জুলাই ২০২৫ তারিখে মো. ইসহাক মাঝিকে সকল প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ হাজির হওয়ার জন্য নোটিশ প্রদান করে। কিন্তু নির্ধারিত তারিখে তিনি সেখানে উপস্থিত হননি। সচেতন মহল বলছে, মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় এ দেশের গৌরবের প্রতীক। সেই পরিচয় যদি কেউ মিথ্যা তথ্যে অর্জন করে, তবে সেটি গোটা জাতির সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা। এছাড়াও জমি বন্দোবস্ত সংক্রান্ত জালিয়াতির অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। প্রকৃত পরিচয় গোপন করে ‘শহিদুল ইসলাম’ নামে এবং স্ত্রী মোসা. জাহানারা বেগমের সঙ্গে যৌথভাবে ৭১০ আম/২০০৬-০৭ নম্বর বন্দোবস্ত মামলায় আলীর বন্দর মৌজার খাস খতিয়ানভুক্ত ৪০৯৪ নম্বর দাগে প্রায় ৯০ শতাংশ জমি বন্দোবস্ত নেন তিনি। অথচ ২০০০ সালের ১৮ এপ্রিল তিনি দুই একর ৬৬ শতাংশ জমি ক্রয় করেন, যা তার ভূমিহীনতার দাবিকে মিথ্যা প্রমাণ করে। তাঁর মা মরিয়ম বেগমের নামেও এক একর জমি বন্দোবস্ত নেওয়া হয়েছে, যেখানে পূর্বেই তার নামে ১৫.৫০ শতাংশ জমি ছিল। একইভাবে শ্বশুর আব্দুস সাত্তার কবিরাজের পুত্র সাজিয়ে মোঃজাকির নামে আরও এক একর জমি বন্দোবস্ত নেওয়া হয়।
একই এলাকার জালাল গাজী তার ভূমি জালিয়াতির বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন।সেই অভিযোগের আলোকে তালতলীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা  (ইউএনও) কড়াইবাড়িয়া ইউনিয়নের ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তা মো. রুহুল আমিনকে তদন্তের নির্দেশ দেন এবং তদন্তে একাধিক অনিয়ম ও জালিয়াতির প্রমাণ মেলে। নুরু মাতুব্বর,জামাল মাস্টার আলতাফ মাস্টারসহ স্থানীয়রা জানান-বিষয়টি নিয়ে জনমনে ক্ষোভ রয়েছে, দ্রুত আইনি ব্যবস্থা চায় এলাকাবাসী,তারা বলেন,জনপ্রতিনিধির দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি এই ধরনের প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ড শুধু অনৈতিকই নয়, বরং রাষ্ট্র ও জনগণের সঙ্গে সরাসরি প্রতারণা। তার বিরুদ্ধে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করে সকল সরকারি সুযোগ-সুবিধা বাতিল করা হোক।  কড়ইবাড়িয়া ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মো.আজিজুল হক শিকদার বলেন,জন্মতারিখ পরিবর্তন করায় ইসাহাক মাঝি তার আপন বড় ভাইয়ের থেকেও ৭ বছরের বড়!এর বেশি কিছু বলতে চাই না। এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত মোঃইসাহাক মাঝি জানান, আমি শিক্ষিত নই, এজন্য ভোটার আইডি কার্ডে জন্ম তারিখ ভুল হয়েছে।সেটা সংশোধন করতে নির্বাচন কমিশনে অষ্টম শ্রেণি পাশের ভুয়া সনদ কেন দিলেন এমন পশ্নে তিনি জানান,জন্ম তারিখ পরিবর্তনের আবেদন আমি করেছি কিন্তু শিক্ষা সনদ নির্বাচন অফিসে কে জমা দিয়েছে আমি জানিনা।বড় ভাই ইব্রাহিম মাঝি আপনার থেকে সাত বছরের ছোট হলো কি করে,প্রশ্ন করতেই তিনি লাইন কেটে দেন।  তালতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের দায়িত্বে থাকা উম্মে সালমা বলেন,ইসাহাক মাঝির বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত রিপোর্ট জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। তথ্য জ্বালিয়াতি করায় তার মুক্তিযোদ্ধা সনদ বাতিল করা হবে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি জানান,এ বিষয়ে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) সিদ্ধান্ত নিবে।এখানে আমার কিছুই করার নেই।