বোয়ালমারীতে মাটি চোরদের হামলায় ইটভাটা ম্যানেজার মারাত্মক আহত

দেশসেবা দেশসেবা

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ২:৩২ অপরাহ্ণ, আগস্ট ৪, ২০২৫
 “রক্ষক যখন ভক্ষক জুটে, রাজার গোলা সিঁকেয় উঠে!” এমন প্রবাদের প্রমাণ মিললো ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে অবস্থিত আল আলী আটোব্রিক ভাটায়।
অভিনব কৌশলে প্রায় দুই বছর অটোভাটার মাটি চুরি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে ৫ নিরাপত্তা কর্মচারী।চোর চক্রকে ধরার পর ২ নিরাপত্তা  কর্মচারী দোষ স্বীকার করলেও মূল হোতাসহ ৩ জন অস্বীকার করে চুরির অভিযোগ। এসময় তিন কর্মচারীকে আটকিয়ে ভাটার অপর কর্মচারীরা মারধর করলে বিষয়টি স্বীকার করে তারা। ঘটনা স্বীকার করে নেওয়ায় তাদের চাকুরীচ্যুত করে বের করে দেওয়া হয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে চোরচক্রসহ সহযোগী বহিরাগত কয়েকজন দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে অটোভাটায় হামলা চালায়। এ সময় দুর্বৃত্তদের হামলায় মারাত্মক আহত হোন ভাটাটির ম্যানেজার সবুজ হোসেন মিয়াসহ আরও দুজন কর্মচারী । মারাত্মক আহত সবুজ মিয়াকে উদ্ধার করে প্রথমে বোয়ালমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। তার বাম হাতে ২২ টি সেলাই ও পিঠে ৩ জায়গায়  দুই ইঞ্চি গভীর ধারালো অস্ত্রের আঘাত রয়েছে। ধারালো অস্ত্রের আঘাতে তার হাতের একটি রগ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকগণ।
ঘটনাটি ঘটেছে শুক্রবার (১আগস্ট) বোয়ালমারী উপজেলার শেখর ইউনিয়নের সাইনবোর্ড এলাকায় মাঝকান্দী ভাটিয়াপাড়া আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে অবস্থিত আল আলী অটোব্রিক ভাটায়।
জানা যায়,  আটো ভাটায় শুকনো মৌসুমে সারা বছরের মাটি সংগ্রহ করে রাখে কর্তৃপক্ষ। স্থানীয় বেশ কয়েকজন মাটি ব্যবসায়ী এসব মাটি সরবরাহ করে থাকে। ভাটায় প্রবেশের প্রধান ফটকে চারজন নিরাপত্তা রক্ষী ও একজন সুপারভাইজার মাটির ওজন পরিমাপ করে রিসিট বা মাটির স্লিপ দিয়ে থাকে। এরপর ভাটার নিজস্ব জায়গায় সংগ্রহ করা হয় মাটি। এবছর ক্রয়কৃত মাটি সংগৃহিত জায়গার অর্ধেকের বেশি খালি পড়ে থাকলে কর্তৃপক্ষের নজরে আসে বিষয়টি। গোপনে অনুসন্ধান চালায় কর্তৃপক্ষ। এতে কেঁচো খুড়তে বেরিয়ে আসে সাপ। দেখা যায় প্রকৃতপক্ষে ভাটাটিতে ১ শত গাড়ি মাটি ঢুকলেও গেট থেকে দেওয়া হয়েছে ১২০/১৩০ গাড়ির রিসিট বা মাটির স্লিপ । মাটি ব্যবসায়ীদের সাথে যোগসাজশ করে এসব ভূয়া স্লিপ জমা দিয়ে  প্রতিদিন ২০/৩০ গাড়ি মাটি চুরি করে বিল তুলে নেওয়া হতো। এ ভাবে প্রতিদিন দেড় থেকে দুই লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে তারা।
এর মূল হোতা নিরাপত্তা রক্ষী শেখর গ্রামের আব্দুল জলিল ঠাকুরের ছেলে  শাহাবুদ্দিন ঠাকুর (২৯)। তার সহযোগীরা হলেন দূর্গাপুর গ্রামের মৃত আব্দুল মান্নানের ছেলে   সুপারভাইজার  কামাল হোসেন মৃধা, শেখর গ্রামের মিয়াজান মোল্যার ছেলে নিরাপত্তা রক্ষী সুজন মোল্যা (৩০), শুকদেব নগর গ্রামের সহিদ মোল্যার ছেলে মিল্লাতুল ইসলাম(২৮) ও শেখপুর গ্রামের ফজর মিয়ার ছেলে মো. দাউদ মিয়া।
বিষয়টি অনুসন্ধানে মাঠে নামলে দুজন মাটি ব্যবসায়ীদের সাথে মাটি চোর চক্রের হোতার সাথে ফোনালাপ ও হোয়াটস অ্যাপে পাঠানো ম্যাসেজ হাতে আসে এ প্রতিবেদকের। ফোনালাপ  ও ম্যাসেজ পর্যালোচনা করে দেখা যায়,  প্রায় দুই বছর যাবত তারা এই অপকর্মের সাথে জড়িত। প্রতিদিনের হিসাব প্রতিদিনই ভাগবাটোয়ারা করে নিতো তারা। ব্যবসায়ীদের সাথে তাদের হিস্যা ছিলো অর্ধেক অর্ধেক। চক্রটি যাতে তাদের এ বিষয়ে কেউ মুখ না খুলে সে কারণে ৫ জন পবিত্র কুরআনের উপর হাত রেখে শপথ করে। প্রাথমিক তদন্তে দুজন দোষ স্বীকার করলেও অপর তিনজন জানান- আমরা কোরআন শরিফ ছুয়ে শপথ করেছিলাম চুরির ঘটনা জীবন বের হয়ে গেলেও প্রকাশ করবো না। যে কারণে আমাদের আটকের পর মারধর করলেও প্রথমে স্বীকার করিনি।
ভাটার ম্যানেজার সবুজ হোসেন মিয়া বলেন- বিষয়টি বুঝতে পেরে আমরা নতুন নতুন নিরাপত্তা রক্ষী নিয়োগ দেই। কিন্তু ওই চোরচক্র তাদের নানা ভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে চাকুরীতে নিরুৎসাহিত করে যাতে তারা নির্বিঘ্নে চুরি করতে পারে।
পরে ভিন্ন কৌশলে কত গাড়ি মাটি ঢোকে সে হিসাব রেখে একজন মাটি ব্যবসায়ীকে চাপদিলে সে বিষয়টি স্বীকার করে তারপর তাদের পাকড়াও করি। পরে চাকুরীচ্যুত করলে এলাকার লোকজন এনে আমার উপর হামলা চালায়। তারা আমাকে হত্যার পরিকল্পনা করেই এসেছিলো।
চোরচক্রকে মারধরের বিষয়ে তিনি বলেন- আমাদের সমাজে চোর ধরা পড়লে তাদের গণপিটুনি দেয়া একটা কালচারে পরিনত হয়েছে, ওই সময় কয়েকজন কর্মচারী তাদের মারধর করে বলে স্বীকার করেন তিনি। তবে, মামলা করবেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন- আমি এখনও চিকিৎসাধীন এ বিষয়টি ভাটা কর্তৃপক্ষ দেখবেন।
তবে, এ বিষয়ে অভিযুক্ত শাহাবুদ্দিনের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাকে না পাওয়ায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
আব্দুল্লাহ আল মামুন রনী ।।