৩৭ বছর ধরে সংবাদপত্র ফেরি করে বেড়ালেও বদলায়নি ভাগ্য

দেশসেবা দেশসেবা

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ৪:০৯ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২৫
শরীফ আহমদ চৌধুরী ।।
সময় বদলায়, বদলায় মানুষ, পেশা ও পরিবেশ। কেউ কেউ সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ভাগ্য পরিবর্তন করেন, আবার কেউ কেউ থেকে যান অভাব-অনটনের চক্রেই। ঠিক তেমনই একজন মানুষ হলেন আব্দুস সালাম। গত ৩৭ বছর ধরে জীবনের কঠিন বাস্তবতা বয়ে চলেছেন পত্রিকা ফেরি করে।
আব্দুস সালাম বালাগঞ্জ উপজেলার চানপুর গ্রামের বাসিন্দা। তিনি মো. আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে। জীবনের দীর্ঘ সময়—প্রায় ৩ যুগ—ধরে তিনি ওসমানীনগর ও বালাগঞ্জ উপজেলার হাটবাজার ও বিভিন্ন অফিসপাড়ায় সংবাদপত্র বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। প্রতিদিন সকালে বাইসাইকেলে করে বাড়ি থেকে বের হয়ে তিনি স্থানীয় ও জাতীয় দৈনিকের কপি নিয়ে পথে নামেন।
সংবাদপত্র বিক্রির পেশায় কিভাবে যুক্ত হলেন জানতে চাইলে আব্দুস সালাম জানান, “ছোটবেলা থেকেই পত্রিকা পড়ার আগ্রহ ছিল। নবম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছি। তখন থেকেই ভাবতাম, পত্রিকা পড়াও হবে, আবার বিক্রিও করা যাবে। তাই স্বল্প পুঁজি নিয়ে শুরু করি পত্রিকা বিক্রির কাজ। তখন অনেক মানুষ নিয়মিত পত্রিকা কিনত, আমিও পরিবার নিয়ে বেশ ভালোভাবে চলতে পারতাম।”
আক্ষেপ করে তিনি বলেন, “এখন আর আগের মতো পত্রিকা বিক্রি হয় না। প্রযুক্তির কারণে বেশিরভাগ মানুষ মোবাইলেই খবর পড়ে ফেলে। আগে ১৫–২০ ধরনের পত্রিকা নিয়ে হাটে, অফিসে, আদালতে যেতাম। এখনও যাই, কিন্তু পাঠক পাই না তেমন। অনেকেই এখন আর পত্রিকা কেনেন না।”
বর্তমানে বয়সের ভারে ক্লান্ত আব্দুস সালাম। তিনি জানান, “এখন আর শরীর আগের মতো নেই। তবুও চেষ্টা করি যতটা পারি ঘুরে ঘুরে বিক্রি করতে। নতুন কোনো পেশায় যেতে পারি না, কারণ বয়স হয়েছে। পত্রিকা বিক্রি করেই চলতে চাই যতদিন পারি। মানুষের সঙ্গে পরিচয় হয়ে গেছে, কিছু পাঠক এখনও আমার অপেক্ষায় থাকেন।”
তিনি বলেন, “আগে পত্রিকা বিক্রি করে সংসার ভালোভাবে চালাতে পারতাম। এখন আমার আয়ে খরচ চলে না। সংসার কিভাবে চালাবো, সেটাই বড় চিন্তা। ছেলে-মেয়েদের মানুষ করেছি, এখন নিজেই টানাপোড়েনে আছি। দেশ-বিদেশের দয়ালু মানুষ, শিক্ষক, ব্যবসায়ী এবং পাঠক সমাজের প্রতি আমার অনুরোধ—আপনারা কেউ যদি সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেন, আমি কৃতজ্ঞ থাকব।যোগাযোগ নাম্বার
০১৭২০৪০০৬৮০
আব্দুস সালাম বর্তমানে এক ছেলে ও তিন মেয়ের জনক। জীবনের শেষ প্রান্তে এসেও আত্মমর্যাদা হারাননি তিনি। কেবল চান, যেন সম্মানের সঙ্গে বাকি জীবনটা পার করতে পারেন।