এনটিসির চা বাগানে মজুরি পাচ্ছে না শ্রমিকরা, কটোর আন্দোলনের হুশিয়ারি

দেশসেবা দেশসেবা

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ৩:৪৬ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২৪

এস.এম আবু রায়হান।। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে কমলগঞ্জে ন্যাশনাল টি কোম্পানীর মালিকানাধীন শ্রমিকরা চা বাগানে নিয়মিত কাজ করলেও মজুরি দিতে পারছে না বাগান কর্তৃপক্ষ। সরকার পতনের পর মাত্র দুই সপ্তাহ মজুরি পেয়েছিলেন তারা। এখন দীর্ঘদিন ধরে মজুরি না পাওয়ায় অর্থে কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন শ্রমিকরা। অনেকের ঘরেই খাবার নেই। সামনেই শারদীয় দুর্গা পূজা হওয়ায় উৎসব বোনাস পাবেন কি পাবেন না সেটা নিয়েও শঙ্কায় দিন কাটছে তাদের। মজুরি না পাওয়ার বিষয়ে মালিক পক্ষ বলছে, সরকার পতনের পর কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ বোর্ড ভেঙে যাওয়ায় মজুরি দিতে পারেনি না তার। তবে পূজার আগেই দ্রুতই মজুরি দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

কমলগঞ্জের এনটিসির মালিকানাধীন ৮ টি চা বাগান রয়েছে। এগুলো হলো পাত্রখোলা চা বাগান চা বাগান, চাম্পা রায় চা বাগান, কুরমা চা বাগান, কুরঞ্জি চা বাগান, বাঘা ছড়া চা বাগান, মাধবপুর চা বাগান, পদ্ম ছড়া চা বাগান, মদন মোহনপুর চা বাগান।বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের তথ্য মতে এই ৮ টি চা বাগানে প্রায় ৮ হাজার শ্রমিক চা বাগানে কাজ করেন। তাদের মজুরির উপর আর প্রায় ২০ হাজার মানুষের ভরন পোষন নির্ভর করে। সরকার পতনের পর মাত্র দুই সপ্তাহ মজুরি পেয়েছিলেন তারা।

পাত্রখোলা চা বাগানের নারী চা শ্রমিক রত্না বাউরী বলেন, ঘরে কোন খাবার নেই, সরকার নামার পর মাত্র দুই সপ্তাহ মজুরি পেয়েছিলাম। আমাদের চা শ্রমিকরা সপ্তাহে যে টাকা পাই সেটা দিয়েই কোন রকমে সংসারটা টেনে নিয়ে যাই। এখন হাতে টাকাও নেই, পরিবারের লোকজন নিয়ে না খেয়ে থাকতে হচ্ছে। আমরা খুবই কষ্ট করে জীবন চালাচ্ছি। মজুরি বন্ধ থাকায় বাগানের কোনো দোকানপাট থেকে বাকিতেও কোনো কিছুই ক্রয় করতে পারছি না। এভাবে মজুরি বন্ধ থাকলে আমাদের না খেয়ে মরতে হবে।

কমলগঞ্জ চা যুব পরিষদের সদস্য সচিব সজল কৈরি বলেন, জেলা প্রশাসকের সাথে সাথে আমাদের বরাবর যোগাযোগ হচ্ছে। তিনি আমাদের আস্বস্ত করেছেন সমাধান হবে। জেলা প্রশাসনের নির্দেশে বাগান বন্ধ না রেখে এখনো শ্রমিকরা কাজ করছে। যদি পুজার আগে চা শ্রমিকদের পাওনা দাওনা না দেওয়া হয় তাহলে আমরা কটুর আন্দোলনে যাবো।

কুরমা চা বাগানের বাগান পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি নারদ পাসী বলেন, আমাদের কমলগঞ্জের এনটিসির সব চা বাগানেই একই অবস্থা। আমাদের শ্রমিকরা মজুরি না পাওয়ায় খুবই কষ্টে দিন কাটাচ্ছে। জমানো টাকা সব শেষ। দোকানদাররা বাকি দিচ্ছে না। অনেকেই না খেয়ে থাকতে হচ্ছে। সামনে আমাদের দুর্গা পূজা। এভাবে চলতে থাকলে চলবে না। শ্রমিকদের আমরা অনেক বুঝিয়ে রেখেছি। শ্রমিকরা মজুরি না পেলেও কাজে ঠিকই যাচ্ছে। কিন্তু এভাবে চলতে থাকলে শ্রমিকরাও আন্দালন সংগ্রামের দিকে এগিয়ে যাবে। আমরা মালিক পক্ষের কাছে জোড় দাবী জানাই, দ্রুত যেন মজুরীর ব্যবস্থা করা হয়।

সাবেক বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারন সম্পাদক রামভজন কৈরি বলেন, কমলগঞ্জসহ সারাদেশে এনটিসির প্রায় ১৬ টি চা বাগান রয়েছে। সবগুলো চা বাগানেই একই অবস্থা। আমরা প্রায় প্রতিদিনই মালিকপক্ষের সাথে যোগাযোগ করছি। শ্রমিকদের মজুরী যেন দ্রুত দেওয়া হয় সেজন্য আমরা সরকারের প্রতিনিধিদের সাথেও কয়েক দফা মিটিং করেছি। শ্রমিকরা শুধু রেশন পাচ্ছেন। কিন্তু মজুরি পাচ্ছেন না। আর মাত্র কয়েক দিন পরই দুর্গা পূজা। শ্রমিকরা যদি পূজার আগে মজুরি বোনাস না পায় তাহলে শ্রমিকরা কঠোর আন্দোলন সংগ্রামে যাবে৷ এতে করে চা বাগানেরই ক্ষতি৷ আমরা সরকারের কাছেও জোর দাবী জানাই, দ্রুত মজুরির ব্যবস্থা করা হোক।

এছাড়াও তিনি বলেন,জেলা প্রশাসন আমাদের যে আস্বস্ত করেছেন সে অনুসারে শ্রমিকরা বেতন ভাতা না পেয়েও কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি আমাদের বলেছেন পুজার আগেই সমাধান হবে। আর যদি না হয় আবারও আমরা কিছুদিনের মধ্যে জেলা প্রশাসকের সাথে আমাদের প্রতিনিধিরা বসবে। যদি সমাধান না হয় তাহলে কুটোর আন্দোলনে যাবো।

ন্যাশনাল টি কোম্পানি (এনটিসি) জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) এমদাদুল হক বলেন, গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর আমাদের বোর্ড প্রায় ভেঙে গেছে। তবে গত মঙ্গলবার আমাদের একটা মিটিং হয়েছে সেখানে চা পরিচালনা বোর্ডের ৫জন ছিলেন, আমরা আরও ২-৩জনকে আরও সংযোজন করা হবে। চা শ্রমিকদের আর সমস্যা থাকবে না। দ্রুত তাদের বেতন বোনাস দেওয়া হবে। আমরা বুধবার থেকে তাদের হাফ বেতন দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি। হয়তো ২-১ দিনের ভিতরে দেওয়া হবে।তিনি আরও বলেন, আমরা ৩২ বছর চাকরির জীবনে চা শ্রমিকদের এই সমস্যা দেখিনি। শুধু পর্ষদ ভেঙে যাওয়া এই সমস্যা হয়েছে। তাদের কষ্ট আমি বুঝি। আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে চা বাগানগুলোতে মজুরী ও পূজার বোনাস দেওয়া হবে।