মেহেরপুরে কানের দুল ছিনতাই সন্দেহে একজনকে বেধড়ক পিটিয়ে আহত

দেশসেবা দেশসেবা

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১:৫৯ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ৩, ২০২৪

মোঃ মাহাবুল। মেহেরপুরের গাংনীতে এক শিক্ষার্থীর কানের দুল ছিনতাই সন্দেহে হক সাহেব নামের এক ব্যবসায়ীকে বেধড়ক পিটিয়ে আহত করেছে শিক্ষার্থীর বাবা ইব্রাহিম খলিলসহ আরও কয়েকজন।
বুধবার (২ অক্টোবর), বেলা ১১ টার দিকে গাংনী উপজেলার তেঁতুলবাড়ীয়া ইউনিয়নের করমদী ডিগ্রি কলেজের পিছনের সড়কে এ ঘটনা ঘটে।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, গত সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর), করমদী মাদ্রাসা পাড়ার ইউসুফ আলীর ছেলে ইব্রাহীম হোসেনের মেয়ে প্রগতি বিদ্যা নিকেতন থেকে বাড়ি ফেরার পথে কে বা কারা চাকু/ছুরির ভয়ভীতি প্রদর্শন করে কান থেকে স্বর্ণের দুল ছিনিয়ে নেয়। একই সময়ে এ ঘটনা কাউকে না জানানোর জন্য ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন। পরে বিষয়টি পরিবারের সদস্যদের জানালে উক্ত সড়কে ঐ দিন কে বা কারা গেছে তা জেনে কৌশলে একে একে কয়েকজনকে ডেকে পাঠানো হয়। অবশেষে করমদী সর্দারপাড়ার মৃত আব্দুল জলিলের ছেলে ব্যবসায়ী হক সাহেবকেউ সুকৌশলে ডেকে পাঠানো হয়। পরে হক সাহেব করমদী সন্ধানী বাজার এলাকায় এলে তাকে করমদী ডিগ্রি কলেজের পিছনে নিয়ে গিয়ে বেদড়ক মারপিট করেন ঐ শিক্ষার্থীর বাবা ইব্রাহিম খলিলসহ আরও কয়েকজন। মারপিটের সময় কেউ বাঁধা দিতে এলে তাঁদেরও হত্যা করা হবে বলে জানান।
ভুক্তভোগী হক সাহেব জানান, আমাকে দুল ছিনতাইকারী সাব্যস্ত করে করমদী গ্রামের ইব্রাহিম, রাকিব ও গালিব কলেজের পিছনে নিয়ে গিয়ে গাছের সাথে বেঁধে বেধড়ক পেটাতে থাকে। এসময় চুরি করেছি এই মর্মে স্বীকার করানোতে আমাকে মেরে ফেলবে বলে লোহার অ্যাঙ্গেল, বাঁশ এবং কাঠের বাটাম দিয়ে একাধারে পেটাতে থাকে। এসময় ভিডিও ধারণ করে এবং মেরে ফেলার হুমকিতে আমার কাছ থেকে জোরপূর্বক চুরির বিষয়ে স্বীকার করিয়ে নেয়। ঘটনায় ভুক্তভোগী হক সাহেবের শরীরের একাধিক অংশে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায় এবং বিভিন্ন অংশে রক্ত বোরোতে দেখা গেছে।
পরে এলাকাবাসীরা ৯৯৯ এ ফোন করলে বামুন্দী পুলিশ ক্যাম্পের এস আই শরিফুল ইসলাম ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে গাংনী থানর (ওসি) তাজুল ইসলামের পরামর্শে আহত হক সাহেবকে চিকিৎসা সেবা নেওয়ার জন্য গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন।
এস আই শরিফুল ইসলাম জানান, দুল চুরির বিষয়ে গত ৩ দিন পূর্বে অজ্ঞাতনামা কয়েকজনের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেছেন ইব্রাহিম খলিল। কিন্তু অভিযোগের সময় কারো নাম না থাকলেও এখন চোর সন্দেহে হক সাহেবকে পিটিয়ে আহত করে দেশের আইনকে অবমাননা করা হয়েছে।
এদিকে হক সাহেবকে হাসপাতালে পাঠানো হলে করমদী পশ্চিমপাড়ায় পৌঁছলে আবারও গতিরোধ করে ইব্রাহিমসহ আরও কয়েকজন।
বিষয়টি নিয়ে ইব্রাহিমের সাথে কথা হলে তিনি গতিরোধ করেননি বলে জানান। একই সাথে হক সাহেবকে কেন মারধর করা হয়েছে জানতে চাওয়া হলে তিনার মেয়ে হক সাহেবকে চোর হিসেবে শনাক্ত করেছে, এজন্য গণধোলাইয়ের সময় বাঁধা প্রদান করতে গিয়ে হয়তো ছিঁড়ে ছুটে গেছে। বেঁধে রেখে বেধড়ক পেটানো আইনসম্মত কিনা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন কিনা জানতে চাইলে বেঁধে রাখার বিষয়ে স্বীকার করলেও মারপিট করা হয়নি বলে দাবি করেন।
এলাকাবাসীর কয়েকজনের কাছে জানতে চাইলে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি হক সাহেবকে বেঁধে মারধরের বিষয়টি নিশ্চিত করেন এবং নিরপরাধ হক সাহেবকে এভাবে মারপিটের তীব্র নিন্দা জানান।
বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য তৌহিদ জানান, আমি সংবাদ পেয়ে কলেজের পিছনে হক সাহেবকে বাঁধা অবস্থায় পেয়েছি। আগে কি ঘটনা ঘটেছে সে বিষয়ে জানিনা। ঘটনায় বামুন্দী পুলিশ ক্যাম্পে ফোন করা হলে কর্মকর্তাগণ ইতিমধ্যেই ঘটনাস্থল পরিদর্শনে এসেছেন।
গাংনী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তাজুল ইসলামকে ফোন করা হলে তিনি জানান, আহত ব্যক্তিকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। চোর সন্দেহে একজনকে মারপিট করে আহত করতে হবে এমন ক্ষমতা কে দিয়েছে ইব্রাহিমকে। আহত হক সাহেবকে আইনের আশ্রয় নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। আগে মারধরের বিচার তারপর চুরির বিচার হবে।