ধামইরহাটে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সম্প্রদায়ের নেচে গেয়ে সোহরাই উৎসব পালন দেশসেবা দেশসেবা ডেস্ক রিপোর্ট প্রকাশিত: ৬:৩২ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ৪, ২০২৪ ছাইদুল ইসলাম ।।নওগাঁর ধামইরহাটে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সম্প্রদায়ের বিলুপ্তপ্রায় ঐতিহ্যবাহী সোহরায় উৎসবকে ধরে রাখতে এবং নতুন প্রজন্মের কাছে তা পৌঁছে দিতে কমরইল (বেড়াআড়া) সোহরাই উৎসব কমিটি ও এলাকাবাসীর আয়োজনে ২২তম ঐতিহ্যবাহী সোহরাই উৎসব উদ্যাপন করা হয়েছে।গত শনিবার (২ নভেম্বর) বিকেল পাঁচটার সময় উপজেলার আগ্রাদ্বীগুণ ইউনিয়নের কুমরইল (বেড়াআড়া) আদিবাসী ফুটবল মাঠে সোহরাই উৎসব কমিটির সভাপতি বিশত তিগ্যার সভাপতিত্বে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও মঙ্গলদীপ প্রজ্বলনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানটি উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল।সরেজমিনে দেখা যায়, সোহরাই উৎসব ঘিরে দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত পাঁচবিবি, পত্নীতলা, সাপাহার গোমস্তাপুর, মহাদেবপুর, জয়পুরহাট, নওগাঁ, চাপাইনবয়াবগঞ্জ, বদলগাছি, পাহাড়পুরসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে সাঁওতাল, মুন্ডা ও ওঁরাও সম্প্রদায়ের বিভিন্ন বয়সী নৃত্যশিল্পীরা নৃত্য পরিবেশনের জন্য বাহারি রঙের পোশাক আর সাজসজ্জায় সেজে দলবদ্ধ হয়ে নারী ও পুরুষেরা অনুষ্ঠানে সমবেত হতে শুরু করেন।অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে আসা নৃত্য শিল্পীদের কারও মাথায় ফুল, কারও মাথায় রঙিন কলস, পুরুষেরা মাদল বাজাচ্ছেন আর নারীরা সোহরাই গীত গেয়ে মাদলের তালে তালে নাচছেন। এই আয়োজন এক নজরবদেখতে দূর-দূরান্ত থেকে এসে ভিড় জমাচ্ছেন স্থানীয় ও দূরদূরান্তের দর্শনার্থীরা।সোহরাই উৎসবের শুরুতেই খোলা মাঠে বাঁশের মাথায় সাদা পতাকা (ঝান্ডি) বেঁধে এর চারদিক ঘিরে বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে নারী-পুরুষের নাচ-গান। অনুষ্ঠানকে ঘিরে দূর-দূরান্ত থেকে আসা প্রতিযোগীরা দলবদ্ধ হয়ে নাচ-গান পরিবেশন করে। সবশেষে উপজেলার কুমরইল (বেড়াআড়া) সোহরাই উৎসব কমিটি বিজয়ী প্রতিযোগিতার মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেন।এ সময় নারীদের হলুদ, লাল ও সাদা, লাল পাড়ের শাড়ি, শাখা-সিঁদুর, গায়ে অলংকার, খোঁপায় বাহারি রঙের ফুল, হাতে ফুলের চুরি, পায়ে নুপুর, মাথায় ফুলের কলসসহ নানা সাজে অনুষ্ঠানে সমবেত হয়ে ৬০টি সাংস্কৃতিক দলের নৃত্য পরিবেশন করতে দেখা যায়। উৎসব দেখতে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ওঁরাও ছাড়াও অন্যান্য ধর্মাবলম্বী শত শত মানুষ ভিড় করেন। অন্যদিকে পুরুষেরা পরনে সাদা ধুতি, গায়ে গেঞ্জি, মাথায় পাগড়ি ও গলায় মাদল ঝুলিয়ে দলবদ্ধ হয়ে কাঁধে কাঁধ, হাতে হাত রেখে ঢাকঢোল পিটিয়ে নৃত্য পরিবেশন করেন। এই নৃত্য চলে বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত। আর এই নৃত্যই বিখ্যাত সোহরাই বা ঝান্ডি উৎসব নামে পরিচিত, যা হাজার বছর ধরে তাদের বংশপরম্পরায় ধর্মীয় উৎসব হিসেবে পালন করে আসছেন। উৎসবে অংশগ্রহণ করতে আসা দীপাবলি ওরাও সময়র আলোকে বলেন, বাপ দাদাদের ঐতিহ্যবাহী গোয়াল পূজা বা সোহরাই উৎসবকে টিকিয়ে রাখতে দলবল নিয়ে তিনি নৃত্য পরিবেশন করতে এখানে ছুটে এসেছেন।সাপাহার এলাকার দল নেতা রঞ্জিত ওরাও বলেন, “তাদের পূর্বপুরুষদের শিল্প ও সংস্কৃতিকে টিকিয়ে রাখতে এই উৎসবে তিনি দলবল নিয়ে অংশগ্রহণ করতে এসেছেন।তিনি আরও বলেন, সোহরাই উৎসব উত্তরবঙ্গের উড়াও, পাহান, সাঁওতাল, মালো, মাহাতো, বইমেলী, রাজোয়ার, মাহালিসহ আদিবাসীদের ধর্মীয় প্রধান ও সামাজিক উৎসব।ধামইরহাট উপজেলা শাখা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি প্রদীপ কুমার আগারওয়ালা বলেন, সোহরাই উৎসবকে ঘিরে বাড়িঘর ধুয়েমুছে উঠোন নিংড়ে বয়স্করা হাঁড়িয়া পান করেন। ওঁরাওরা নিজ নিজ বাড়ি, বাড়ির চারপাশ, তুলসীতলা, ধানখেত, বাঁশবাগান ও সমাধিস্থলে মাটির তৈরি প্রদীপ জ্বালিয়ে শুরু করেন ‘সোহরাই’। সকাল থেকে চলে গোয়ালপূজা ও গবাদিপশুর বিশেষ যত্নআত্তি। এদিন বিবাহিত মেয়েরা তাঁদের বাবার বাড়িতে যাওয়ার সুযোগ পান। কারণ পারিবারিকভাবে মেয়েদের আমন্ত্রণ জানানো ধর্মীয় রেওয়াজ।পাঁচ আগস্টে নওগাঁ জেলার সকল শহীদদের প্রতি স্মরণ করে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল সময়ের আলোকে বলেন, “সোহরাই উৎসবে কাঁধে কাঁধ রেখে আপনাদের প্রতিটি ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা দেখে অভিভূত হয়েছি। সর্বক্ষেত্রে এই শৃঙ্খলার অভাবেই আমরা ধীরে ধীরে নষ্ট জাতিতে পরিণত হয়েছি।তিনি আরও বলেন, “আমাদের নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর যতটুকু অস্তিত্ব রয়েছে সেই অস্থিতটুকু বহাল থাকবে। আমাদের অন্তর্বর্তী সরকার সে বিষয়ে সজাগ রয়েছে। আপনাদের যেকোন প্রয়োজনে আমার দরজা সবসময় খোলা রয়েছে।এসময় উপস্থিত ছিলেন, নবাগত উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোস্তাফিজুর রহমান, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক মো. আলমগীর কবির, শীতল (মাঠ) বিওপির নায়েক রোকনোজ্জামান, আগ্রাদ্বীগুন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইসমাইল হোসেন মোস্তাক, ধামইরহাট উপজেলা শাখা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি প্রদীপ কুমার আগারওয়ালা, সাধারণ সম্পাদক তাপস কুমার প্রমুখ। SHARES সারা বাংলা বিষয়: