ব্যাংক খাতে ভয়াবহ ভগ্ন পরিস্থিতি

দেশসেবা দেশসেবা

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ২:৪১ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ১৪, ২০২৪
রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ব্যাংক খাতে যে অস্থিরতা শুরু হয়েছিল তা এখনো চলমান। ক্ষমতাচ্যু আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরে আমলে দেশের ব্যাংক খাতে একের পর এক অনিয়ম ও দুর্নীতির ঘটনা ঘটেছে, হয়েছে জাল-জালিয়াতিসহ হরিলুট। লুটপাটকারীরা ঋণের নামে আমানতকারীদের অর্থ আত্মসাতের পাশাপাশি তা বিদেশে পাচারও করেছে। ওই সময় বিতরণকৃত ঋণ ও ঋণের বিপরীতে আরোপিত সুদ আদায়ে বিঘ্ন ঘটেছে, এমনকি উলটো সুদ মওকুফের ঘটনাও ঘটেছে। স্বাভাবিকভাবইে এতে ব্যাংকগুলোর আয় কমেছে। ব্যাংকগুলোর মোট আয়ের বৃহৎ অংশই আসে বিতরণ করা ঋণ, বিনিয়োগ, ধার দেওয়া অর্থ, বৈদেশিক মুদ্রার ব্যবসা ও অন্যান্য সম্পদ থেকে। এ খাতে আয় গত ১৫ বছরের মধ্যে সর্বনিম্নে চলে গেছে। গত ১৮ বছরের মধ্যেও এ খাতের আয় এখন সর্বনিমে। এছাড়া আয় কমেছে মূলধন থেকেও। এদিকে ব্যাংকের ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের বিপরীতে মূলধন রাখার হারও কমেছে। কয়েকটি ব্যাংকে তারল্য সংকট ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।বাংলাদেশ ব্যাংকের একাধিক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত ১৮ বছর ধরে ব্যাংক খাতে সম্পদ থেকে আয়ের হার কমছে। বিগত সরকারের আমলে প্রথম ২ বছর সম্পদ থেকে আয় আগের বছরের চেয়ে সামান্য বাড়লেও এরপর থেকে ধারাবাহিকভাবে কমেছে। মাঝেমধ্যে বেড়েছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতা গ্রহণের পরই ব্যাংক খাতের সুশাসন দূর হতে থাকে। এর প্রভাব পড়তে থাকে বিভিন্ন ব্যাংকে। ওই সময়ে সোনালী ব্যাংকসহ ২৬টি ব্যাংকে হলমার্ক গ্রুপের ৪ হাজার কোটি টাকার ঋণ জালিয়াতির ঘটনা ধরা পড়ে। এছাড়া আরও বেশ কয়েকটি ব্যাংকে জালিয়াতি হয়। ফলে ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অযৌক্তিভাবে সুদ মওকুফের হিড়িক পড়ে। ফলে ব্যাংকগুলোর সম্পদ থেকে আয় কমে যায়। ২০১৩ সালে প্রকাশ পায় বেসিক ব্যাংক জালিয়াতির ঘটনা। এ ঘটনায় ৬ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়। এসব ঋণও পর্যায়ক্রমে খেলাপি হয়। এরপর একের পর এক ভয়াবহ ঘটনা ঘটেছে।আওয়ামী লীগ সরকারের একের পর এক ভুল ও দুর্নীতির কারণে দীর্ঘদিন ধরে অর্থনীতিতে যে সংকট চলছে, তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আর্থিক খাতের এই অস্থিরতা। ফলে ব্যাংক খাতের পরিস্থিতি কেবল নাজুকই হয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, এই পরিস্থিতি থেকে আর্থিক খাতকে বের করে আনতে হলে সবার আগে বাংলাদেশ ব্যাংককে শক্ত অবস্থানে দাঁড়াতে হবে। কমিশন গঠন হতে পারে দীর্ঘমেয়াদি একটি পদক্ষেপ, যার মাধ্যমে ব্যাংক খাতে যে সংস্কার কার্যক্রম দরকার, তা নিরূপণ করা হবে। ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা ফেরানো, সুশাসন নিশ্চিত করা, নিয়ম মেনে ঋণ দেওয়া ও আস্থার ঘাটতি দূর করতে হবে। এসব পদক্ষেপ নিতে পারলে ব্যাংক খাতে দৃশ্যমান উন্নতি হবে। এ খাতের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকল্পে করণীয় সবই করতে হবে।
———————–