সিরাজগঞ্জের শাহজাপুরে চুল কাটতে বলায় মারধর, ১১ মাস অজ্ঞান থাকা সেই বৃদ্ধের মৃত্যু দেশসেবা দেশসেবা ডেস্ক রিপোর্ট প্রকাশিত: ২:৩৭ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ১৮, ২০২৪ হাফিজ মোহাম্মদ হক।।সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলায় দুষ্টুমির ছলে বড় চুল কাটতে বলায় মানুদাকান্ত লাহিড়ী নামে এক বৃদ্ধকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে বেধড়ক পিটিয়ে গুরুতর আহত করে মশিউর রহমান ও তার দুই ছেলে। দীর্ঘ ১১ মাস অজ্ঞান থাকার পর মারা গেলেন সেই বৃদ্ধ মানুদাকান্ত।শুক্রবার (১৩ ডিসেম্বর) সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। তিনি ১১ মাস অজ্ঞান অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। নিহত মানুদাকান্ত উপজেলার কৈজুরী ইউনিয়নের জামিরতা গুদিবাড়ী গ্রামের মৃত লক্ষীকান্ত লাহিড়ীর ছেলে। এর আগে গত ১৬ জানুয়ারি তাকে পিটিয়ে জখম করে একই গ্রামের মশিউর রহমান ও তার তার দুই ছেলে আবির রহমান (২৫) ও নিবির রহমান সনি (২২)।শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) রাতে শাহজাদপুর থানার ওসি মো. আসলাম আলী বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, শুক্রবার সিরাজগঞ্জ হাসপাতালে মানুদাকান্দ মারা যান। সদর থানা পুলিশ তার সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করেছে। শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। মানুদাকান্ত আহত হওয়ার পরপরই তার স্ত্রী শান্তনা লাহিড়ী বাদী হয়ে ৩ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ৪/৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। তিনি আরও বলেন, মামলার পর আসামিরা উচ্চ আদালত থেকে অগ্রিম জামিন নিয়েছিলেন। জামিনের মেয়াদ শেষ হলে আসামিরা সিরাজগঞ্জ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন। বিচারক জামিন না মঞ্জুর করে তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। তবে ১৮ দিন জেলহাজতে থাকার পর উচ্চ আদালত থেকে জামিন পান। বর্তমানে তারা জামিনে মুক্ত আছেন। ওসি আরও বলেন, ঘটনার সময় ৩২৬ ধারায় দায়ের করা মামলার সঙ্গে ৩০২ ধারা যোগ করার জন্য আদালতে আবেদন করা হয়েছে। মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, গত ১৬ জানুয়ারি জামিরতা গুদিবাড়ি গ্রামে একটি চায়ের দোকানে চা পান করছিলেন মানুদাকান্ত। সেখানে এলাকার কয়েক তরুণ আড্ডা দিচ্ছিল এবং হাসি-তামাশা করছিল। এ সময় মানুদাকান্ত তামাশার ছলে তাদের বড় চুল কাটতে বলেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে একই গ্রামের মশিউর রহমানের বখাটে দুই ছেলে আবির রহমান ও নিবির রহমান তাদের বাবার কাছে অভিযোগ করে। এরপর ওই দিনই মশিউর মানুদাকান্তকে ফোনে বাড়িতে ডেকে আনেন। সে আসার সঙ্গে সঙ্গে বাবা ও তার দুই ছেলেসহ অজ্ঞাত আরও কয়েকজন তাকে বেধড়ক পেটায় এবং দেশীয় অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে রাস্তায় ফেলে রাখে। স্থানীয়রা উদ্ধার করে তাকে শাহজাদপুর হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে প্রথমে বগুড়া, পরে ঢাকার একটি প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তি করেন। ঢাকার ওই হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যয় মেটাতে না পারায় অজ্ঞান অবস্থায় তাকে সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শুক্রবার সকালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এ হাসপাতালেই অজ্ঞান চিকিৎিসাধীন ছিলেন মানুদাকান্ত। নিহতের ভাতিজা তুষার কান্ত লাহিড়ী বলেন, আমরা সেদিন রাতেই কাকাকে বগুড়া থেকে ঢাকার ইবনে সিনা হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করি। মারধরে কাকার মাথার খুলি ভেঙ্গে গিয়েছিল। মাথায় অস্ত্রোপচারের পরে আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সেখানে লাইভ সাপোর্টে রাখার পর খরচ যোগাতে না পেরে সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করি। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ওই হাসপাতালেই তিনি অজ্ঞান অবস্থায় ভর্তি ছিলেন। প্রায় ৪৫ থেকে ৫০ লাখ টাকা খরচ করেও কাকাকে বাঁচাতে পারলাম না। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (শাহজাদপুর সার্কেল) মো. কামরুজ্জামান বলেন, আমরা আদালতে ৩০২ ধারা সংযোজন করার আবেদন করেছি। আদালত এ আবেদনের শুনানি করবেন। SHARES সারা বাংলা বিষয়: