নারায়নগঞ্জে ওএমএসের ডিলার নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ – কৈফিয়ত চাইতে কার্যালয়ে আবেদনকারীরা

দেশসেবা দেশসেবা

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ৩:১০ অপরাহ্ণ, জুলাই ৭, ২০২৫
জিকে সোহাগ।।
নারায়নগঞ্জে ওএমএস (খোলা বাজারে খাদ্যশস্য বিক্রয়) এর ডিলার নিয়োগে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ  উঠেছে। এবিষয়ে কৈফিয়ত চাইতে কার্যালয়ে গিয়ে প্রতিবাদ ও তদন্তের দাবি জানিয়েছেন আবেদনকারীরা।
গত বুধবার (২ জুলাই) বিকেলে, নারায়ণগঞ্জ  শহরের, বঙ্গবন্ধু সড়কের পাশে অবস্থিত জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ে গিয়ে জড়ো হয় তারা।
তবে আবেদনকারীদের কার্যালয়ে যাওয়ার বিষয়টি পুরোপুরি অস্বীকার করেছেন জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা মোহাম্মদ বাবুল হোসেন। তিনি বলেন, আমি সারাদিন অফিসেই ছিলাম, এমন কেউ আসেনি।
এদিকে আবেদনকারীরা জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের উপরোক্ত বক্তব্যকে প্রত্যাখ্যান করে বলেন, “নতুন ডিলারশীপ নিয়োগের ক্ষেত্রে আমাদের অযোগ্য হওয়ার ঘোষণাকে চ্যালেঞ্জ জানাতে, আমরা জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ে গিয়েছিলাম। যে সময় কার্যালয়ে খাদ্য নিয়ন্ত্রক উপস্থিত ছিলেন না। আর পরিদর্শক আমিনুর রহমান জুয়েল সকাল থেকেই নিজের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন বন্ধ রেখেছে। আমরা সেখানে কিছু সময় অবস্থান করে চলে এসেছি।”
তারা আরও জানান, গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর তারা জানতে পেরেছেন, নতুন ডিলারশীপ নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আবেদন অযোগ্য ঘোষণা কারণ এবং লটারিতে কেন তাদের আমন্ত্রণ  জানানো হয়নি এবিষয়ে তারা কার্যালয়ে গিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
তাদের দাবি লটারির দিন জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম মিঞা ২টি লটারি নিজ হাতে তুলেন। এরপর তিনি জরুরি কাজে চলে যাওয়ায়, বাকি ১৮টি লটারি তোলা হয় জেলা প্রশাসকের অনুপস্থিতিতেই । ওই ১৮টি লটারিতে থাকা নাম প্রকাশ্যে উপস্থিত  আবেদনকারীদের দেখানো হয়নি। এখানেই দুর্নীতি করে , প্রতি ডিলারশীপের বিপরীতে, প্রায় দশ লক্ষ টাকা করে দেওয়া আবেদনকারীদের নাম বসিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এবিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ বাবুল হোসেন গণমাধ্যমকে জানান, সরকার থেকে মোট ৩৯টি ডিলার নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছিল। আমরা ৩৮টি ডিলার নিয়োগ দিতে পেরেছি। ৩৯টি ডিলারের বিপরীতে ১৪৯ জন প্রার্থী আবেদন করেছিলেন। গত ২৫ জুন লটারীর মাধ্যমে ১৮টি ডিলার   নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বাকি ২০টি ডিলারের বিপরীতে ১জন করেই প্রার্থী ছিল। দ্বিতীয় কোন প্রার্থী না থাকায় বাকি ২০টির লটারি করা হয়নি। ‎লটারি হওয়া ১৮টি ডিলারের মধ্যে ২টি বাদে, বাকি ১৬টির নাম কেন জনসম্মুখে প্রদর্শন করা হয়নি এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বিষয়টি তার জানা নাই।
উল্লেখ্য, দীর্ঘদিন যাবত মামলা সংক্রান্ত জটিলতার কারণে ওএমএসের নতুন করে ডিলার নিয়োগ স্থগিত ছিল। সম্প্রতি মামলা নিষ্পত্তি হওয়ায়, নতুন ডিলারশীপ নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়। মোট ৩৯টি ডিলারশীপ নিয়োগের বিপরীতে আবেদন জমা পড়েছিলো প্রায় দেড়শতাধিক। এর প্রেক্ষিতে গত ২৫শে জুন, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে লটারির মাধ্যমে ২০টি ডিলার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ডিলারশীপ পাওয়া ব্যক্তিদের নাম তাত্ক্ষণিক প্রকাশ করা হয়নি এবং বাকী যে ১৮টি ডিলার লটারি ছাড়াই নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, সেখানেও অস্বচ্ছতার অভিযোগ তুলেছেন আবেদনকারীরা।
এবিষয়ে মূল অভিযোগের তীর, জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিসের খাদ্য পরিদর্শক আমিনুল ইসলাম জুয়েলের বিরুদ্ধে। এই পরিদর্শক, দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে নারায়ণগঞ্জেই চাকরি করছেন। বিভিন্ন সময় তার বদলী আদেশ হলেও তিনি নারায়ণগঞ্জেই থেকে গেছেন রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে। বর্তমানেও তিনি মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া এলাকায় বদলী হলেও সংযুক্ত হিসেবে আবারও  নারায়ণগঞ্জেই রয়ে গেছেন।
এই পরিদর্শকের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ তুলে ধরছেন  পুরাতন ডিলার, নতুন আবেদনকারী ও জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ের কিছু কর্মকর্তা – কর্মচারী।
মুঠোফোন বন্ধ থাকায় তার সাথে যোগাযোগ সম্ভব হয়নি। তবে এসকল অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করতে গণমাধ্যমের অনুসন্ধান অব্যাহত রয়েছে।