দালালবাজার রামগঞ্জ সড়ক যেন মৃত্যু কূপ

দেশসেবা দেশসেবা

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ৫:৪১ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২৫
মেহেদী হাসান রাসেল।।
লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার উপশহর দালালবাজার তেহমুনী থেকে মীরগঞ্জ পর্যন্ত প্রায় ৯ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কটির বেহাল দশায় তিন উপজেলার লক্ষ লক্ষ মানুষ চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন। দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় রাস্তাজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে অসংখ্য বড় বড় গর্ত, খানাখন্দ ও জলাবদ্ধতা। কোথাও কাদা জমে চলাচল হয়ে পড়েছে দুর্বিসহ, আবার কোথাও এতোটাই ভাঙাচোরা যে ঝুঁকি নিয়ে যানবাহন চালাতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এতে দুর্ঘটনা ঘটছে প্রায়ই, সৃষ্টি হচ্ছে দীর্ঘ যানজট।
স্থানীয়দের অভিযোগ, লক্ষ্মীপুর সদর, রায়পুর ও রামগঞ্জ উপজেলা ছাড়াও চাঁদপুর ও নোয়াখালীর হাজারো মানুষ এই সড়ক ব্যবহার করে থাকেন। অথচ গত দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে সড়কটি জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে। সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেই সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের। ফলে এ পথ এখন যেন ‘মৃত্যুকূপে’ পরিণত হয়েছে।
গর্তে আটকে যানবাহন, ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজট
সড়কটি দিয়ে প্রতিদিন চলাচল করছে অটোরিকশা, সিএনজি, ট্রাকসহ ছোট-বড় সব ধরনের যানবাহন। কিন্তু গর্তে আটকে প্রায়ই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে যান চলাচল। কোথাও কোনো গাড়ি আটকে থাকলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সৃষ্টি হয় যানজট। যাত্রীদের মাঝপথে নামিয়ে হাঁটতে হয়। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়ছেন অসুস্থ ও বয়স্ক মানুষ এবং স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। অ্যাম্বুলেন্সও সঠিকভাবে চলাচল করতে পারছে না।
স্থানীয় পরিবহন চালকরা জানান, ভাঙাচোরা রাস্তায় গাড়ি চালাতে গিয়ে প্রতিদিনই দুর্ঘটনা ঘটছে। প্রায়ই যানবাহনের নাট-বল্টু খুলে যাচ্ছে, নষ্ট হচ্ছে বিভিন্ন যন্ত্রাংশ। এতে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন চালকেরা। আর যাত্রীদের লাগছে অতিরিক্ত সময় ও ভাড়া—মাত্র ৯ কিলোমিটার পথ যেতে লেগে যাচ্ছে এক ঘণ্টারও বেশি সময়।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বাজারঘেরা জনবহুল পথ
সদর উপজেলার দালালবাজার–রামগঞ্জ সড়কটির দুই পাশে রয়েছে প্রায় ২০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও একাধিক বড়-বড় বাজার। শিক্ষার্থীদের প্রতিদিন এই ভাঙা রাস্তায় চলাচল করতে হচ্ছে। বিকল গাড়িতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থেকে পরীক্ষায় দেরি করা কিংবা স্কুলে না পৌঁছাতে পারার মতো সমস্যায় পড়ছেন তারা। স্থানীয় ব্যবসায়ী ও দোকানিরাও জানাচ্ছেন, সড়কের এই দুরবস্থার কারণে বাজারে সরবরাহ বিঘ্নিত হচ্ছে, বাড়ছে পরিবহন খরচ।
প্রশাসনের প্রতিশ্রুতি
লক্ষ্মীপুর জেলা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ইকরামুল হক জানান, দালালবাজার তেহমুনী থেকে মীরগঞ্জ পর্যন্ত ৮ কিলোমিটার ৮৯৭ মিটার রাস্তার উন্নয়নকাজের জন্য ‘হেভি প্রজেক্ট’ অনুমোদন পেয়েছে। অচিরেই দরপত্র আহ্বান করা হবে এবং শক্তিশালীভাবে কাজ শুরু হবে। এ সময় তিনি ভুক্তভোগীদের কিছুটা ধৈর্য ধরার আহ্বান জানান।
এলাকাবাসীর ক্ষোভ ও প্রত্যাশা
পশ্চিম গঙ্গাপুর এলাকার প্রবাসী কাজল  বলেন, “সংস্কারের অভাবে এই সড়ক এখন মৃত্যু ফাঁদে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন যাত্রীরা যেমন দুর্ভোগে পড়ছেন, তেমনি গাড়ি নষ্ট হয়ে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছেন চালকেরা। প্রশাসন দ্রুত ব্যবস্থা নিলে লাখো মানুষ উপকৃত হবেন।”
স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, সন্ধ্যার পর এ রাস্তায় যান চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। অন্ধকারে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ে। অসুস্থ রোগীদের জরুরি অবস্থায় পরিবহন না পাওয়ায় প্রাণ সংশয় দেখা দেয়।
এলাকাবাসী ও পথচারীরা বলেন, এই সড়কের দ্রুত সংস্কার করা এখন সময়ের দাবি। তিন উপজেলার জনজীবন স্বাভাবিক রাখতে এবং বারবার প্রাণহানির ঘটনা এড়াতে অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে প্রশাসনকে।