কোর্স সম্পন্ন করেও সনদ পাননি ১৮১ শিক্ষার্থী, দাবি ক্ষতিপূরণের

দেশসেবা দেশসেবা

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ২:৫২ অপরাহ্ণ, আগস্ট ২৯, ২০২৪

রাকিব হোসাইন।।শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার কার্তিকপুরের মধুপুরে অবস্থিত জয়নুল হক সিকদার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (জেডএইচসিইউএসটি) আইন বিভাগে মাস্টার্স অব ল (এলএলএম) ও ইংরেজি বিভাগে এমএ কোর্স সম্পন্ন করেও দীর্ঘ বছর সনদপত্র পাননি শিক্ষার্থীরা।জানা গেছে, ২০১৬ সালে শুরু হয়ে ২০১৯ সালে শেষ হওয়া এলএলএম ৮টি ও এমএ ৭টি ব্যাচে প্রায় ১৮১ শিক্ষার্থী ভর্তি হয়ে তাদের কোর্স সম্পন্ন করেছেন। কোর্স সম্পন্ন করার প্রায় ৭ বছর পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত তাঁরা কোনো সনদপত্র পাননি।

তবে শিক্ষার্থীদের চাপের মুখে কোর্সের অর্থ প্রদান শুরু করেছে প্রশাসন।বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সালে ৫ অক্টোবর এলএলএম ও এমএ কোর্স অনুমোদন পাওয়ার জন্য সিলেবাস জমা দেওয়া হয় বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে (ইউজিসি)। তবে ৭ বছর পার হলেও এই কোর্সের অনুমোদন পায়নি তারা। তাই অনুমোদন না থাকায় কোর্স শেষ করেও সনদ পাননি শিক্ষার্থীরা।বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তা কামাল হোসেন জানান, ২০১৬ সালে জানুয়ারি মাসে শুরু হওয়া এমএ ইংলিশ এক বছর কোর্সে ৮০ হাজার ৬২৫ টাকা, দুই বছর কোর্সে ১ লাখ ৫০ হাজার ৪২৫ টাকা এবং এলএলএম এক বছর কোর্সে ৭২ হাজার ১২৫ টাকা, দুই বছর কোর্সে ১ লাখ ৩৩ হাজার ৬২৫ টাকা নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

এক বছরের কোর্সে ৩ সেমিস্টার ও দুই বছরের কোর্সে ৬ সেমিস্টার ছিল। সেমিস্টার অনুযায়ী টাকা নেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়টি তাদের কার্যক্রম শুরু করে ২০১২ সালে। বর্তমানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৮০৪ জন।এদিকে এলএলএম ও এমএ কোর্স অনুমোদন না পাওয়ার পরও কেন দুটি কোর্সে ভর্তি করলেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ- এই বিষয়ে ক্ষতিপূরণ চেয়ে গত সোমবার (২৬ আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয় সামনে শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়ে বিক্ষোভের প্রস্তুতি নিলে উপাচার্য শিক্ষার্থীদের ডেকে সভা করেন।

এসময় শিক্ষার্থীরা তাদের দাবি তুলে ধরে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক আইন বিভাগের চেয়ারম্যান এমরান পারভেজ খান ও ইংরেজি বিভাগের চেয়ারম্যান কাউসার আহম্মেদ তাদের কোর্সে ভর্তি করেন। এই ঘটনার জন্য ওই দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণ চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেবে। না হলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে শিক্ষার্থীরা।ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা বলেন, নম্বরপত্র কিংবা সনদপত্রের অভাবে অনেকেই উপযুক্ত চাকরির জন্য আবেদন করতে পারছেন না, কারো কারো পদোন্নতি দীর্ঘায়িত হচ্ছে, কারও চাকরি স্থায়ীকরণ হচ্ছে না, এমনকি অনেকের চাকরির জন্য নির্ধারিত বয়সসীমা পেরিয়ে যাচ্ছে।

আইন বিভাগের শিক্ষার্থী মিনহাজ আহমেদ নিলয় ও রাসেল রহমান বলেন, ‘আমরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলএম কোর্স শেষ করি ২০১৭ সালে। কোর্স শেষ করেও সনদ পাইনি। পরে জানতে পারি এই দুই কোর্সে তারা অনুমোদন পায়নি। আমাদের যখন কোনো চাকরির নিয়োগ পরীক্ষা থাকত, তখন বিশ্ববিদ্যালয় গিয়ে সনদ চাইলে তারা আমাদের বলতেন এই কয়েক মাস পর অনুমোদন পেলেই সনদ দেওয়া যাবে। এমন করতে করতে ৭ বছর পার হয়ে গেলে সনদের মুখ দেখতে পেলাম না। আমাদের সঙ্গে তারা প্রতারণা করেছেন। আমরা আমাদের ক্ষতিপূরণ চাই।’

ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী ফাহিমাতুল মুসাহিদা বলেন, ‘আজ হবে, কাল হবে এমন টালবাহানা করে কর্তৃপক্ষ আমাদের ৭ বছর ধরে প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করে রেখেছে। অথচ আমাদের মধ্যে কারো কারো চাকরির বয়সসীমা পেরিয়ে যাচ্ছে। এমতাবস্থায় প্রচণ্ড হতাশা ও বেকারত্ব আমাদের কুরে কুরে খাচ্ছে। আর যারা চাকরিরত আছেন তারা শুধুমাত্র সনদের অভাবে প্রাপ্য পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।’এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচার্য প্রফেসর ডা. তালুকদার লোকমান হাকিম বলেন, ‘এলএলএম ও এমএ ইংলিশ কোর্সে ভর্তি হয় ১৮১ জন শিক্ষার্থী। তাদের কোর্স সম্পূর্ণ হলেও তৎকালীন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের সনদ দিতে পারেনি। সেই বিষয়ে সিলেবাস সংক্রান্ত কিছু জটিলতা সৃষ্টি হয়েছিল।

২০১৫ সালের অক্টোবরে এলএলএম ও এমএ ইংলিশ কোর্স চালু করার জন্য সিলেবাস সম্পূর্ণ করে ইউজিসিতে পাঠানো হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত সিলেবাস অনুমোদিত হয়নি। শিক্ষার্থীদের যে ক্ষতি হয়েছে তা পূরণ করার মতো নয়। তবুও তার সমাধানের চেষ্টা চলছে। শিক্ষার্থীদের দাবিকৃত ১ কোটি ৮ হাজার ৯৬৯ টাকার মধ্যে ৩৭ লাখ ২৭ হাজার ১৬৪ টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে। বাকি টাকা একসঙ্গে ফেরত দেওয়া হবে।’উপাচার্য আরও বলেন, ‘সাবেক শিক্ষক এমরান ও কাউসার উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়ে শিক্ষার্থীদের এলএলএম ও এমএ কোর্সে ভর্তি করেন। আমরা সব বিষয়গুলো খতিয়ে দেখেছি। পাশাপাশি সমাধানের চেষ্টা করছি