কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ‘ড্রাইভিং কোর্সে’ নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ

দেশসেবা দেশসেবা

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ৫:১৩ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২, ২০২৪

এস.এম আবু রায়হান।। মৌলভীবাজারের সরকারি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের (টিটিসি) ‘ড্রাইভিং উইথ অটোমেকানিক্স কোর্সে’ বছরের পর বছর নানা দুর্নীতি ও নানা অনিয়মের মাধ্যমে বেকার প্রশিক্ষণার্থীদের কাছ থেকে অর্থ লোপাট করে নিজেদের আখের গোছানোর অভিযোগ ওঠেছে ওই প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।জানা যায়, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীনে ২১ থেকে ৪৫ বছর বয়সীদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তি তৈরি করে দেশে ও বিদেশে চাকরির সুযোগ করে দেয়ার লক্ষ্যে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) কর্তৃক পরিচালিত মৌলভীবাজারের কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে নানা কোর্সে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে।

এরমধ্যে দীর্ঘদিন যাবত ড্রাইভিং উইথ অটোমেকানিক্স কোর্সে ব্যাপক দুর্নীতি ও নানা ধরণের অনিয়মের অভিযোগ করছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা।জানা যায়, এই প্রতিষ্ঠানে বছরের পর বছর ধরে প্রশিক্ষণার্থীদের কাছ থেকে নানা অজুহাতে অর্থ আদায়, চিকিৎসকের ভুয়া সিল বানিয়ে ভুয়া রেজিষ্ট্রেশন নম্বর দিয়ে জাল স্বাক্ষর করারও অভিযোগ রয়েছে কোর্সের ইন্সট্রাক্টর মোহাম্মদ আবু ইউসুফ ইমন ও অন্যান্য কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।কোর্সে নানা ধরণের দুর্নীতি এবং অনিয়ম হলেও প্রশিক্ষণে থাকা অবস্থায় মুখ খুলে কথা বলার সাহস পায়নি অনেক ভুক্তভোগী প্রশিক্ষণার্থীরা। সম্প্রতি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ড্রাইভিং কোর্সের বিভিন্ন ব্যাচের প্রশিক্ষণার্থীদের সাথে এ প্রতিবেদকের আলাপকালে নানা অনিয়ম দুর্নীতির তথ্য তারা তুলে ধরেন।

সম্প্রতি সরজমিনে মৌলভীবাজার কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে (টিটিসি) গিয়ে ড্রাইভিং উইথ অটোমেকানিক্স কোর্সের বিষয়ে খোঁজ খবর করে জানা যায়, প্রতি বছর তিন মাস অন্তর অন্তর বছরে চারটি গ্রুপে ৩২০ জন (প্রতি গ্রুপে সকালের ব্যাচে ৪০ জন ও বিকেলের ব্যাচে ৪০ জন করে) বেকার যুবক-যুবতীকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়।প্রশিক্ষণার্থীরা অভিযোগ করেন ‘ড্রাইভিং উইথ অটোমেকানিক্স কোর্সে’ নামমাত্র প্রশিক্ষণ করানো হয়। কোর্স ইন্সট্রাক্টর, প্রশিক্ষক ও কর্মকর্তাদের ফাঁকিবাজি এবং অনিয়মের কারণে প্রকৃত প্রশিক্ষণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তারা।ড্রাইভিং উইথ অটোমেকানিক্স কোর্সের জুলাই-ডিসেম্বর ২০২৩ এর দুইটি ব্যাচ এবং জানুয়ারি-মার্চ ২০২৪ ব্যাচের সকল প্রশিক্ষনার্থীদের ‘ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য মেডিকেল সার্টিফিকেট’ ফরম-২ এ দেখা যায় এতে ‘ডাক্তার চন্দ্র শেখর কর, মেডিকেল অফিসার’ এ নাম ও পরিচয়ে দুই লাইনের একটি সিল মারা ছিল।

তার নিচে হাতে লেখা রেজিষ্ট্রেশন নং অ-৭৫২৩৪ আর সিলের উপরে একটি স্বাক্ষর রয়েছে। বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিলে খোঁজ নিয়ে এ রেজিষ্ট্রেশন নম্বর ও চিকিৎসকের কোন অস্থিত্ব পাওয়া যায়নি। এছাড়া ওই চিকিৎসক ভুয়া ও তার সিল জালিয়াতির কথা স্বীকার করেন কোর্সের ইন্সট্রাক্টর মোহাম্মদ আবু ইউসুফ ইমন।ড্রাইভিং উইথ অটোমেকানিক্স কোর্সের অষ্টম ব্যাচ (জুলাই-সেপ্টেম্বর-২০২৩) এর প্রশিক্ষণার্থী তৌফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ ও ভাতা পাবার কথা শুনে যখন মৌলভীবাজার কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ড্রাইভিং উইথ অটোমেকানিক্স কোর্সে ভর্তি হই তখন ভর্তি বিজ্ঞপ্তির নোটিশে ৬০ টাকা লেখা থাকলেও আমাদের কাছ থেকে ১০০ টাকা করে আদায় করা হয়েছে। ভর্তির পর লার্ণার লাইসেন্স ফি বাবদ আমাদের কাছ থেকে আদায় করা হয় ৮০০ টাকা।

অথচ লার্ণার ফি প্রদানের পর আমাদের মুঠোফোনে ৫২৫ টাকার এসএমএস আসে। অর্থাৎ ৫২৫ টাকার ফি নেয়া হয়েছে ৮০০ টাকা করে। এছাড়া ডোপ টেস্ট ও আইটেস্ট করানোর জন্য ২০০ টাকা করে ৪০০ টাকা। ক্লাস এবং পরীক্ষার কথা বলে ২০০ টাকা দিয়ে একটি স্পাইরাল বাইন্ডিং করা বই আমাদের কিনতে বাধ্য করা হয়। কিন্তু বই কেনার পর আর কোনো ক্লাস হয়নি। কোর্সের শেষদিকে নানা অজুহাতে আরো ২ হাজার ৫০০ টাকা নেয়া হয়েছে।একই অভিযোগ করেন আরও কয়েকজন প্রশিক্ষণার্থী।সরকারি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ড্রাইভিং উইথ অটোমেকানিক্স কোর্সের অষ্টম ব্যাচ (জুলাই-সেপ্টেম্বর-২০২৩) এর প্রশিক্ষণার্থী আশিকুর রহমান চৌধুরী শনিবার ৩১ আগস্ট মুঠোফোনে বলেন, আমরা ২০২৩ সালে ড্রাইভিং কোর্স সমাপ্ত করি।

২০২৪ সালের আগস্ট মাসও শেষ, কিন্তু এখন পর্যন্ত আমি লাইসেন্স ফি’র ৩ হাজার ২৯০ টাকা পাইনি। তবে যাতায়াত ফি বাবত ছয় হাজার দুইশত টাকা পেয়েছি। যাতায়ত বাবদ মোট বরাদ্দ বিষয়ে জানতে চাইলে কোর্স ইন্সট্রাক্টর মোহাম্মদ আবু ইউসুফ ইমন বলেন ফোনে বলা যাবে না, তোমার জানার দরকার হলে অফিসে এসে জেনে যেও। লার্নার ফি কবে পাবো জানতে চাইলে স্যার বলেন এই ব্যাচের সবার বরাদ্দের টাকা এখনো আসেনি। তবে আসা করি শিগগির আসবে।এদিকে কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের অধ্যক্ষ মো: আকতার হুসেন এর বিরুদ্ধে চলতি মাসের ২৮ আগস্ট অভিযোগ উঠেছে টিটিসিতে বিভিন্ন ট্রেডের ভাইভা পরীক্ষার দিন নারী শিক্ষার্থীদের হিজাব-নেকাব খুলতে বাধ্য করা, মুখ না খোলা শিক্ষার্থীদের ‘নিনজা’ সেজে এসেছে বলে সম্বোধন করা, স্বল্প আওয়াজে বিভিন্ন বিরক্তিকর মন্তব্য করা।

এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে টিটিসির সরকারি প্রশিক্ষণের ড্রাইভিং এর গাড়ি নিয়ে শ্রীমঙ্গল ও মৌলভীবাজার শহরে ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করার অভিযোগও রয়েছে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে।এসব অভিযোগের ব্যাপারে মৌলভীবাজারের কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ড্রাইভিং উইথ অটোমেকানিক্স কোর্সের ইন্সট্রাক্টর মোহাম্মদ আবু ইউসুফ ইমন বলেন, লার্ণারের কাজ বাইরে থেকে করাই তাই তাদের কিছু খরচপাতি দিতে হয়। স্কেনিং-টেস্কিং আছে, অনলাইন চার্জ আছে। সেজন্য প্রশিক্ষণার্থীদের কাছ থেকে ৫২৫ টাকার ফি ৮০০ টাকা করে নেই। পুরো টাকাটাই কম্পিউটারের দোকানকে দিয়ে দেই। আমরা কোন টাকা রাখি না।

মৌলভীবাজার কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের অধ্যক্ষ মো: আকতার হুসেন বলেন, ‘প্রশিক্ষণার্থীদের উত্থাপিত সকল অভিযোগ সঠিক নয়। আমি এখানে আসার আগে মৌলভীবাজার টিটিসি জঙ্গলে পরিপূর্ণ ছিল। আমি এটিকে কার্যক্রমের আওতায় নিয়ে এসেছি।’ গিয়ে তার কোথাও কোন ভুল হচ্ছে কিনা তা খতিয়ে দেখবো। যুগ-যুগ ধরে সমাজে যা চলে এসেছে তা পাল্টানো যাবে না। আপনি পারবেন কি সমাজ পাল্টাতে? আমি সরকারি দপ্তর চালাই। অভিযোগ যেহেতু ওঠেছে বিষয়টি দেখবো। যদি আমাদের কোন কর্মকর্তা,কর্মচারী দুর্নীতি ও অনিয়মের সাথে জড়িত আছে এমন প্রমাণ পাই তবে ব্যবস্থা নেবো।সরকারি গাড়ি ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, যখন প্রকল্পটি বন্ধ ছিল, তখন আমি গাড়ি ব্যবহার করেছি, প্রকল্প শেষ হলে ব্যক্তিগত কাজে গাড়ি ব্যবহারে কোনো বাধা নেই।