কুলাউড়ায় বেতন না পেয়ে ৭০ শিক্ষকের মানবেতর জীবন ভুক্তভোগীদের সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ।

দেশসেবা দেশসেবা

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ৫:৪৭ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ১৯, ২০২৪

এস.এম আবু রায়হান।। মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় ৭০টি স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকা দীর্ঘ দশ মাস যাবত বেতন পাচ্ছেন না। এতে তারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন।বৃহস্পতিবার ১৭ অক্টোবর দুপুরে কুলাউড়া মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে ভুক্তভোগী শিক্ষকরা সংবাদ সম্মেলন করে এই অভিযোগ করেন। এরআগে গত ৩০ সেপ্টেম্বর কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবরে ১৩টি ইউনিয়নের ৭০টি স্কুলের শিক্ষক/শিক্ষিকারা ঘর ভাড়াসহ বেতন প্রাপ্তির জন্য একটি লিখিত আবেদন দেন।সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগী শিক্ষকরা বলেন, উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো এর আওতায় আউট অব স্কুল চিলড্রেন এডুকেশন প্রোগ্রাম পিইডিপি-৪ সাব কম্পনেন্ট ২.৫। আর ডি আর এস বাংলাদেশ ও সহযোগী সংস্থা ইরা সুনামগঞ্জ এর মাধ্যমে এক শিক্ষক বিশিষ্ট স্কুল পরিচালনা করে আসছে। ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত শিক্ষকদের বেতন এবং ঘর ভাড়া পরিশোধ করা হয়েছিল। কিন্তু চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত কোন প্রকার বেতন ভাতা ও ভাড়ায় চালিত ঘরের ভাড়া বাবদ কোন টাকা দেওয়া হয় নাই। ১০ মাসে উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের ৭০ জন শিক্ষকের মাসিক বেতন ৫ হাজার টাকা করে মোট ৩৫ লাখ টাকা ও ঘর ভাড়া বাবদ ৮ লাখ ৪০ হাজার টাকাসহ মোট ৪৩ লাখ ৪০ হাজার টাকা পাওয়ার কথা ছিল। কিন্ত কোন বেতনভাতা পাইনি।শিক্ষকরা বলেন, এই প্রকল্পের মেয়াদ ডিসেম্বর ২০২৪ এ শেষ হবে। কর্তৃপক্ষ গত ১০ মাস যাবত আমাদের বেতন ও ঘর মালিকদের ঘর ভাড়া আটকে রেখেছে। কুলাউড়ার সংশ্লিষ্ট সুপারভাইজার ও জেলার দায়িত্বরতদের একাধিকবার যোগাযোগ করলেও তারা বেতন ভাতা দেবার বিষয়ে সঠিক কোন উত্তর দেননি। দশ মাস সময় শেষ হওয়ার পথে কিন্তু আমরা বেতন না পাওয়ায় আমরা মানবেতর জীবনযাপন করছি। পরিবার চালাতে আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। শুধুমাত্র ঝড়েপড়া শিক্ষার্থীদের স্কুলে ফিরিয়ে আনতে আমরা ঘরমালিককে অনেক বুঝিয়ে শিক্ষার্থীদের পাঠদান দিয়ে যাচ্ছি।শিক্ষকরা আরো বলেন, একজন শিক্ষককের মাধ্যমে ক্লাস ওয়ান থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত ছয়টি বিষয়ে পাঠদান দিয়ে যাচ্ছেন। এলাকায় ঝড়েপড়া শিক্ষার্থীদের স্কুলে ফেরাতে আমরা প্রতিটি গ্রামে গিয়ে খোঁজে খোঁজে বের করে শিক্ষার্থীদের স্কুলে এনে যত্ন সহকারে পাঠদান দিয়ে যাচ্ছি। বিভিন্ন সময়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, শিক্ষা অফিসারসহ সংশ্লিষ্টরা স্কুল পরিদর্শনে গিয়ে আমাদের পাঠদানের বিষয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। অনেক সময় ঘর মালিকরা তাদের ঘরভাড়ার জন্য আমাদের বিভিন্নভাবে চাপপ্রয়োগ করছেন এবং স্কুল বন্ধ করার হুমকি দিচ্ছেন। আমরা স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে আকুল আবেদন জানাচ্ছি যে, ঝড়েপড়া শিক্ষার্থীদের ধরে রাখতে আমাদের সার্বিক দিক দিয়ে বিবেচনা করে সকল শিক্ষকদের বেতন ও ঘর মালিকদের ভাড়া দিতে যেন দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হয়।সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন রিমা বেগম, নার্গিস আক্তার, সবিতা ধর, সাবিনা আক্তার, আশীষ দেব, সবা কর্মকার, হাজেরা আক্তার, আসমা বেগম, চয়ন দেব, জয়নাল মিয়া, সানজিদা আক্তার শাম্মী, সারথী দোষাদ, আলোমনি দাস, নিত্য মল্লিক, আব্দুল কাশেম, শিপাউর রহমান, শাহানারা আক্তার, সুমনা খানম, রাধিকা রাজভর, মনিকা দেব, তামান্না বেগম, মিলি বেগম, লিলি আক্তার, মমতাজ আক্তার ঝর্ণা, মরিয়ম বেগম, জায়েদা খানম, হামিদা বেগম, মনি কানু, শিউলী দাস, নমিতা রানী দাস, গীতা গোয়ালা, সাধনা পৈবত্র, শ্যামলী, রিবা কানু, হরেষ কুর্মী, ইমন আহমদ, সুজন রবিদাস, রুমা রবিদাস,  আহাদ মিয়া, মাজিদুল হাসান, রত্না বেগম প্রমুখ।প্রকল্পের সুপারভাইজার আব্দুল গফফার চৌধুরী জানান, প্রকল্প থেকে আমরাও বেতন পাচ্ছি না। বিষয়টি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো মৌলভীবাজারের সহকারী পরিচালক কিশলয় চক্রবর্তী বলেন, সারাদেশের ৩৫৬টি উপজেলায় এনজিও আরডিআরএস ও ইরার মাধ্যমে কার্যক্রম চলমান আছে। বেতন ও ঘরভাড়া সারাদেশের শিক্ষকদের বন্ধ রয়েছে। বর্তমানে একনেকে বিলটি অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। অনুমোদন হলে শিক্ষকদের বেতন ও ঘর মালিকদের ভাড়া পরিশোধ করা হবে।উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মহিউদ্দিন বলেন, আমি স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে ডেকে আমার কার্যালয়ে এনেছিলাম। তাদের কাছ থেকে জানতে পেরেছি একনেকে বিল জমা রয়েছে। সেখান থেকে অনুমোদন হলেই শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বেতন ও ঘর ভাড়া পরিশোধ করা হবে।