নওগাঁয় শত কোটি টাকা হাতিয়ে এক বছরে নিরুদ্দেশ ৮সমিতি

দেশসেবা দেশসেবা

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ৪:০৩ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২, ২০২৪

মোঃ আরাফাত আলী ।। চলতি বছর নওগাঁ জেলায় আটটি সমবায় সমিতির উদ্যোক্তা ও কর্মকর্তারা গ্রাহকের আমানতের টাকা ফেরত না দিয়ে হঠাৎ করে কার্যক্রম বন্ধ করে লাপাত্তা হয়ে গেছেন বলে জানা যায়।ওই আটটি সমবায় সমিতি হচ্ছে, নওগাঁ সদর উপজেলায় সুরমা মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড, ডলফিন সমবায় সমিতি, জগৎসিংহপুর সূর্যমুখী বহুমুখী উন্নয়ন সমবায় সমিতি, বন্ধু মিতালী ফাউন্ডেশন, মেঘনা সেভিংস এন্ড ক্রেডিট কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড, মহাদেবপুর উপজেলার ব্যতিক্রম ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিমিটেড এবং মান্দা উপজেলার আল আরাফাহ সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি লিমিটেড। এসব সমবায় সমিতির উদ্যোক্তা ও কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অন্তত পাঁচ হাজার গ্রাহকের প্রায় ৩০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। লাগাতার আন্দোলন ও মামলা করেও গ্রাহকেরা তাঁদের সঞ্চিত টাকা ফেরত পাচ্ছেন না।আত্মগোপনে থাকা দোয়েল সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতির নির্বাহী পরিচালক জাহাঙ্গীর হোসেন মুঠোফোনে বলেন, ‘জুলাই-আগস্টের আন্দোলনের পর থেকে সমিতির সদস্যরা সবাই একসঙ্গে আমানতের টাকা ফেরত চাইতে শুরু করে। সবাই একসঙ্গে জমা টাকা ফেরত চাওয়ায় বেকায়দায় পড়ে যাই। গ্রাহকদের কাছ থেকে মাসিক ও স্থায়ী আমানত হিসেবে আমার সমতিতিতে প্রায় ২১ কোটি সঞ্চয় আছে। সেই টাকা থেকে ১৬ কোটি টাকা ক্ষুদ্র ঋণ হিসেবে দরিদ্র ও অসহায় মানুষদের কাছ থেকে ঋণ দেওয়া আছে। সেই টাকা তুলতে না পারায় সদস্যদের টাকা ফেরত দিতে পারছি না। কিন্তু সদস্যরা তা মানতে চান না। টাকা না পেলে অনেকেই আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছেন। নিরাপত্তার কারণে গত শুক্রবার থেকে আমি আত্মগোপনে আছি। তবে প্রশাসন আমাকে নিরাপত্তা দিলে আমি এলাকায় ফিরে আমার সম্পদ বিক্রি করে গ্রাহকদের সব টাকা ফেরত দেব। কারও টাকা আত্মসাৎ করব না।ভুক্তভোগীরা জানান, ‘জেলা ও উপজেলা কার্যালয় থেকে সমবায় সমিতি হিসেবে নিবন্ধন নেওয়ার পর সমিতির উদ্যোক্তা ও কর্মকর্তা বেশি মুনাফার লোভ দেখিয়ে সাধারণ মানুষদের প্রলুব্ধ করে অবৈধভাবে ব্যাংকের আদলে মাসিক ও বার্ষিক আমানত প্রকল্প, স্থায়ী বিনিয়োগ ও স্থায়ী আমানত নামে বিভিন্ন প্রকল্পের বিপরীতে টাকা রাখতে শুরু করে। টাকা জমা রেখে গ্রাহকদের প্রতি মাসে মুনাফা দিতে থাকে প্রতিষ্ঠানগুলো। ধীরে ধীরে সমিতির গ্রাহকসংখ্যা ও আমানতের পরিমাণ বাড়তে থাকে। এভাবে গ্রাহকদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা সংগ্রহ করে প্রতিষ্ঠানগুলো। এক সময় গ্রাহকদের আমানতের টাকা আত্মসাৎ করে পালিয়ে যায় সমিতির উদ্যোক্তা ও কর্মকর্তারা।’নওগাঁ জেলা সমবায় সমিতি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, নওগাঁর ১১টি উপজেলায় নিবন্ধিত সমবায় সমিতির সংখ্যা ১ হাজার ৬২০টি। এর মাধ্যমে ঋণদান কার্যক্রম পরিচালনা করছেন ৪৫০টি সমিতি।গ্রাহকদের সঞ্চয়ের টাকা নিয়ে একের পর এক সমবায় সমিতির লাপাত্তা হওয়ার বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন নওগাঁর সাবেক সম্পাদক বেলাল হোসেন বলেন, ‘প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সমবায় কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের অসর্তকর্তার কারণে এসব হচ্ছে। এতে নিরীহ ও অসহায় মানুষ সমবায় সমিতির খপ্পরে পড়ে নিঃস্ব হচ্ছে। এসব সমস্যা উত্তরণে নিবন্ধন দেওয়ার আগে আরও ভালো করে যাচাই-বাছাই করা প্রয়োজন। নিবন্ধন দেওয়ার পর সমবায় কার্যালয়কে সমিতিগুলোকে ভালো করে মনিটরিং করতে হবে। এছাড়া প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে তদারকি বাড়াতে হবে।গ্রাহকের টাকা সমিতির লাপাত্তা হওয়ার বিষয়ে জেলা সমবায় কর্মকর্তা খোন্দকার মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘নওগাঁতে ৪৫০টির মতো ঋণদানকারী সমিতির কার্যক্রম বর্তমানে চলমান আছে। এর মধ্যে কয়েকটি সমবায় সমিতি সম্প্রতি গ্রাহকদের সঞ্চয়ের টাকা ফেরত না দিয়ে অনিয়মতান্ত্রিকভাবে তাঁদের কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে। গ্রাহকদের অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত সাপেক্ষে এসব সমিতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গ্রাহকদের টাকা আত্মসাতের ঘটনায় সমিতির কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আদালতে ও থানাতেও একাধিক মামলা চলমান আছে।তিনি আরও বলেন, ‘সমিতির সদস্যদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে সেই টাকা উৎপাদনশীল খাতে না খাটিয়ে অনেক সময় সমিতির কর্মকর্তারা জমিজমা কিংবা বাড়ি-গাড়ি কিনে থাকেন। এসব করতে গিয়ে সমিতিগুলো দেউলিয়া হয়ে যায়। অনিয়মতান্ত্রিকভাবে সমিতি পরিচালনার কারণে গ্রাহকেরা যখন লভ্যাংশ কিংবা আমানতের টাকা ফেরত চান তখন তাঁদের টাকা দিতে পারছে না সমিতিগুলো। আগামীতে কোনো সমবায় সমিতি যাতে অনিয়মতান্ত্রিকভাবে চলতে না পারে সে ব্যাপারে আমাদের মনিটরিং কার্যক্রম বাড়ানো হবে।’