বরগুনায় বর্জ্য শোধনাগার চালুকরণের জন্য গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত

দেশসেবা দেশসেবা

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ৩:৪৮ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ১০, ২০২৪
মোঃ শাহজালাল।। বরগুনায় বর্জ্য শোধনাগার চালুকরণের জন্য গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। মাল্টিপার্টি এডভোকেসি ফোরামের ব্যবস্থাপনায় ইউকেআইডি ও ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের সহযোগিতায় রবিবার বেলা ১১ টায় বরগুনা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়।মাল্টিপার্টি এডভোকেসি ফোরামের সভাপতি চিত্তরঞ্জন শীলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত গোল টেবিল বৈঠকে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের উপপরিচালক দিপু হাফিজুর রহমান, বরগুনা প্রেসক্লাবের সভাপতি অ্যাডভোকেট মোস্তফা কাদের, বরগুনা পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ রফিকুল ইসলাম রিপন ও পৌরসভার সমাজ উন্নয়ন কর্মকর্তা মোঃ কামাল হোসেন।গোল টেবিল বৈঠকে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন বরগুনা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি জাকির হোসেন মিরাজ, সঞ্জীব কুমার দাস, মনির হোসেন কামাল, সমাজসেবক সুখরঞ্জন শীল, বরগুনা প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু জাফর সালেহ, অর্থ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবীর মৃধা, মোঃ গোলাম রাসেল খোকন, সাংবাদিক বেলাল হোসেন মিলন, রিয়াজ আহমেদ মুছা, সাংস্কৃতিক কর্মী ইসরাত জাহান মীম প্রমুখ।
গোল টেবিল বৈঠকে আলোচকগণ জানান, ১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে বরগুনা পৌর শহরের বর্জ্য শোধনাগার স্থাপিত হয়েছে ২০২১ সালে। পৌর শহরের সোনাখালীর ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় ফেলা হচ্ছে পুরো শহরের ৮ থেকে ১০ টন বর্জ্য। যা দূষিত করছে আশপাশের পরিবেশ। সোনাখালীর ভাগাড়ের ৫০ গজের কম দূরত্বে রয়েছে ১০টি পরিবার। মশা মাছির উপদ্রবের পাশাপাশি ময়লা পোড়ানো ধোঁয়ায় শ্বাসকষ্টে ভুগছেন শিশু বৃদ্ধসহ সবাই। হাসপাতালের বর্জ্য ও সাধারণ বর্জ্যের সংমিশ্রনে হুমকিতে পড়েছে মানুষের জীবন। সোনাখালীর ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় অবস্থিত ময়লার এ ভাগাড়ে আগুন জালিয়ে দেয় পৌরসভার পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা। সেই আগুন জ্বলতে থাকে দিনভর। ময়লা-আবর্জনা ও পলিথিনসহ প্লাস্টিক বর্জ্য পোড়া ধোঁয়া ও গন্ধে দুর্বিষহ দিন কাটছে এখানকার মানুষের।আলোচকরা বলেন, ২০ বছর ধরে ময়লা ফেলতে ফেলতে এখন সোনাখালীর ময়লা ভাগাড় বিশাল স্তূপ হয়ে গেছে। এখনো প্রতি রাতে ট্রাকে করে ময়লা ফেলা হয় এই স্তূপের ওপর। সেই ময়লা ভোর পর্যন্ত উপচে রাস্তার চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে। তখন আবার বেড়ে যায় দুর্গন্ধের মাত্রা। সকাল থেকে দুপুর- পুরো সময় জুড়েই নাক ঢেকে চলাচল করতে হয় স্কুল-কলেজ, অফিস-আদালতগামী পৌরবাসীকে।পুরো শহরের ময়লা ফেলানোর পরে এখানে থাকা প্লাস্টিক বর্জ্যে আগুন ধরিয়ে দেয় তারা। এসময় শ্বাস নেওয়া খুবই কষ্টসাধ্য হয়। একদিকে ময়লার দুর্গন্ধ অন্যদিকে প্লাস্টিক আর পলিথিন পোড়া গন্ধে দম বন্ধ হয়ে আসে। পৌরসভাগামী লাখো মানুষ ছাড়াও আশপাশের কয়েকটি স্কুল কলেজের হাজারো শিক্ষার্থী প্রতিদিন এই পথে যাতায়াত করে।পৌরসভা নির্বাচনের আগে মেয়র প্রার্থীরা আশ্বাস দেন তিনি নির্বাচিত হলে এখান থেকে ময়লা সরিয়ে নেবেন। এজন্য আমরা তাকে ভোট দেই। কিন্তু নির্বাচিত হলেও তার দেওয়া কথা রাখেন না জনপ্রতিনিধিরা। রাস্তার পাশে খোলা স্থানে ময়লা ফেলার কারণে দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ শিক্ষার্থীসহ পথচারীরা।বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে এলজিএসপি প্রকল্পের আওতায় বর্জ্য শোধনাগার তৈরি করা হয়েছে বরগুনা সদর ইউনিয়নের হেলিবুনিয়া গ্রামে। বরগুনা পৌর শহরের সব বর্জ্য সোনাখালী এলাকায় খোলা স্থানে ফেলে রাখে পৌর কর্তৃপক্ষ। আবাসিক এলাকা, গ্রাম ও জনবসতিপূর্ণ স্থানে পৌরসভার ময়লার ভাগাড় করার কোনো বিধান না থাকলেও এটি করা হয়েছে এবং তা টিকে আছে। এই বর্জ্যের দুর্গন্ধে এই এলাকায় বসবাস করা এখন কঠিন হয়ে পড়েছে। দিন রাত ২৪ ঘণ্টা এই দুর্গন্ধের মধ্যেই থাকতে হয় এলাকাবাসীর। পৌর শহরের বর্জ্য শোধনাগার তৈরি করা হয়েছে ১৬ কোটি টাকা ব্যয় করে। দক্ষ ও অভিজ্ঞ জনবল না থাকায় বর্জ্য শোধনাগার ব্যবহার করছে না পৌর কর্তৃপক্ষ।আলোচকরা বলেন, অপরিকল্পিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কারণে ইতোমধ্যে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের অনেক ক্ষতি হয়। এভাবে খোলা স্থান তো ময়লার ভাগাড় হতে পারে না। খোলা স্থানে হাসপাতালের ও সাধারণ বর্জ্যের সংমিশ্রণে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে স্থানীয়রা। তাই খোলা স্থান থেকে ময়লা সরিয়ে নিয়ে হাসপাতাল বর্জ্য ও সাধারণ বর্জ্য আলাদাভাবে রিসাইক্লিং করতে হবে। নাহলে দুটি বর্জ্য মিলে বিষাক্ত গ্যাস তৈরি হয়ে মানুষের শরীরে মারাত্মক ক্ষতি করে।অভিজ্ঞ লোকবল না থাকায় বর্জ্য শোধনাগারের ব্যবহার করা যাচ্ছে না বলে জানান পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ রফিকুল ইসলাম রিপন বলেন, শিগগিরই লোকবল নিয়োগ দিয়ে হেউলিবুনিয়া এলাকার জনশূন্য এলাকায় নির্মিত শোধনাগারটি চালু করা হবে। ১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে পৌর শহরের বাইরে বর্জ্য শোধনাগার নির্মাণ করা হয়েছে। কাজ শেষে শোধনাগার উদ্বোধনও করা হয়েছিল। দক্ষ ও অভিজ্ঞ জনবলের অভাবে যা এখন পড়ে আছে।আগামী স্বল্প সময়ের মধ্যেই ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল, বরগুনা প্রেসক্লাব ও মাল্টিপার্টি অ্যাডভোকেসি ফোরাম সম্মিলিতভাবে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করে বর্জ্য শোধনাগার চালু করার ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেন আলোচকগণ।