ইসলাম পন্থিদের বৈষম্যর হাতে সমকামী

দেশসেবা দেশসেবা

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ৫:১৪ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ১২, ২০২৪

সমকামী ব্যক্তি সর্বসময় সকল স্থানে অরক্ষিত এবং তারা সর্বদা নিপীড়ন, বৈষম্য, দুর্ব্যবহারের এমনকি প্রায়শ নির্যাতন ও হত্যার মত চরম সহিংসতার শিকার হন। অধিকাংশ স্থানে সমকামী ব্যক্তির সমাবেশ, সংগঠন ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা চরম্ভাবে ধ্বংস করে। তাদের প্রতি বৈষম্য সমাজের প্রচলিত চিরাচরিত নিয়মের মধ্যে বিদ্যমান এবং সেগুলোর মাধ্যমে লৈঙ্গিক অসমতাকে চিরস্থায়ী করার প্রয়াশ পায়। বাংলাদেশের কিছু কিছু স্থানে প্রাপ্ত বয়স্ক সমলিংগীয় দুজন ব্যক্তির যৌন সম্পর্ক শাস্তিযোগ্য অপরাধের শব্দের আওয়াজ তুলে শাস্তি হিসেবে সশ্রম কারাবাস অথবা মৃর্ত্যুদণ্ড নির্ধারিত করা হয়েছে। শুধুমাত্র যৌন প্রবৃত্তি ও লৈঙ্গিক পরিচয়ের কারনে সমকামী ব্যক্তির মারাত্বকভাবে সহিংসতার শিকার হওয়াকে ন্যায়সঙ্গত বলে প্রতিপাদন করছে কিছু ধর্মীজ্ঞানপূর্ন নামি মানুষজন, যদিও শুধুমাত্র সাংস্কৃতিক, প্রথাগত ও ধর্মীয় মূল্যবোধের কারণে সমকামী ব্যক্তির প্রতি বৈষম্য প্রদর্শণ ন্যায্য বলে প্রতিপাদন করার চেষ্টা কোনভাবে গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।

সমকামী ব্যক্তির প্রতি বৈষম্য প্রদর্শন ও তাদের ঘৃনার চোখে বা হীন দৃষ্টিতে দেখার হাত থেকে সুরক্ষা প্রদানের সুনির্দিষ্ট আইনী কাঠামো বাংলাদেশে অনুপস্থিত। ফলে সারা দেশে সমকামী ব্যক্তি যখন চাকরি, স্বাস্থ্য সেবা বা শিক্ষা গ্রহণের চেষ্টা করে তখন তারা শুধু মাত্র তাদের যৌন প্রবৃত্তি ও লৈঙ্গিক পরিচয়ের কারণে বৈষম্যের শিকার হন। চাকরি, স্বাস্থ্য সেবা বা শিক্ষা ক্ষেত্রে বৈষম্যের কারনে সমকামী ব্যক্তি বেশি পরিমানে দারিদ্রতার শিকার হন। অন্য সব নাগরিকের মত সমকামী ব্যক্তিরও যে সকল ক্ষেত্রে সকল সময় বৈষম্যহীন ব্যবহার লাভের অধিকার রয়েছে তা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক আইন, কনভেনশন ও চুক্তি দ্বারা স্বীকৃত হয়েছে। বিশেষত নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক চুক্তির ২ ও ২৬ নং অনুচ্ছেদ এবং অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক চুক্তির ২ নং অনুচ্ছেদের মাধ্যমে তা স্পষ্টভাবে প্রতিয়মান হয়। তাছাড়া, জাতিসংঘের বিভিন্ন ট্রিটি বডি এবং স্পেশাল র্পর্টিয়ারগণও সমকামী ব্যক্তির বৈষম্যহীন ব্যবহার লাভের অধিকারকে জোড়ালো সমর্থন প্রদান করেছে। ২০০৮ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে বিশ্বের পাঁচটি প্রধান অঞ্চলের ৬৮ টি রাষ্ট্রের সমর্থনে মানবাধিকার, যৌন প্রবৃত্তি ও লৈঙ্গিক পরিচয়ের উপর একটি বিবৃতি প্রদান করা হয়, যা ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন সমর্থন করে।

বিবৃতিটি শুধুমাত্র যৌন প্রবৃত্তি ও লৈঙ্গিক পরিচয়ের কারনে বিচারিক হত্যাকাণ্ড, সেচ্ছাচারী আটক ও অন্যান্য মানবাধিকার লংঘনকে তীব্রভাবে তিরস্কার করা হয়। একইসাথে বিবৃতিটির মাধ্যমে বৈষম্যহীনতার মূলনীতি প্রতিষ্ঠার উপর গুরুত্ব প্রদান করা হয়। কিন্তু আজ বাংলাদেশের মানুষ সমকামিতাকে অপরাধ হিসেবে গন্য করার সাথে সাথে সর্বসময় সকল স্থানে তাদের অরক্ষিত , নিপীড়ন, বৈষম্য, দুর্ব্যবহারের এমনকি প্রায়শ নির্যাতন ও হত্যার মত চরম সহিংসতার শিকার করছে। দেশের এরূপ সমকামিতাকে অপরাধ হিসেবে গন্য করা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের পরিপন্থী এবং তা সমকামী ব্যক্তির বেঁচে থাকা, ব্যক্তিগত গোপনীয়তা, ব্যক্তি স্বাধীনতা, ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যের অধিকারসহ সমিতি গঠন, সমাবেশ করা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার লংঘনসহ তার সার্বিক মানবাধিকারের লংঘন।

সমকামীতাকে আইনগতভাবে অপরাধ হিসেবে গন্য করার মাধ্যমে সমকামিতা বিষয়ক আলোচনাসহ ব্যক্তির মৌলিক স্বাধীনতাকে ধ্বংস করা হয়। সমকামীতাকে অপরাধ হিসেবে গন্য করায় বিদ্যমান প্রিজুডিস ও সামাজিক স্টিগমা বৃদ্ধি পায় এবং তাদের প্রতি বৈষম্য আইনী রূপ লাভ করে। এতে করে সমকামী ব্যক্তি আরো বেশি অরক্ষিত হয়ে পড়ে এবং তারা সাধারণ জঙ্গন সহ পুলিশের নৃশংসতা, নির্যাতন এবং অন্যান্য প্রকারের নিষ্ঠুর অমানবিক ও অবমাননাকর আচরণের মত সহিংসতার বেশী শিকার হন। ব্যবসায়ীক যৌনকর্ম নিরোধ আইন, উৎপাত বিরোধী আইন, তথাকথিত ক্রস ড্রেসিং নিরোধ আইনের মত আইনী ব্যবস্থায় অনেক সময় সমকামী ব্যক্তিরা লক্ষবস্তুতে পরিনত হয় এবং পুলিশ সদস্য সেসব আইনের অপব্যবহারের মাধ্যমে সমকামী ব্যক্তিদের শুধুমাত্র তাদের যৌন প্রবৃত্তি, লৈঙ্গিক পরিচয় ও লৈঙ্গিক অভিব্যক্তির কারনে অভিযুক্ত করে বিচারে সোপর্দ করে তাদের শাস্তি প্রদান করে।

তছাড়া, সমকামী ব্যক্তির পরিচয়পত্রে তাদের সঠিক লৈঙ্গিক পরিচয়ের প্রতিফলন না থাকায় তারা সহিংসতার শিকার হলেও ন্যায়বিচার প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হয়। কুমিল্লা জেলার, ব্রাহ্মণপাড়া থানার, গোপালনগর গ্রামের, আলমগীর সামছুল হক, তিনি বলেন, “আমি ও আমার বন্ধু সাইফুল সমকামিতা মানবমুক্তির স্বপক্ষে ইতিবাচক ধারণা পোষণ করি। আমি মনে করি সমকামিতা হলো মানব সম্প্রদায়ের একটি একান্ত ব্যক্তিস্বাধীনতার অধিকার। আমার বন্ধুরা এলজিবিটিকিউ ব্যক্তিদের যেমন – লেসবিয়ান, গে এবং ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তিদের জন্য সমান অধিকারের পক্ষে কথা বলে।

আমিও মনে করি বিশ্বজুড়ে সমকামীদের পক্ষে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো ইতিবাচক মতপোষণ করে। পরবর্তীতে জানতে পারি সমকামিতা বা Homosexuality ইসলাম ধর্মে সম্পূর্ন হারাম। ইসলাম ধর্মে বলা হয়েছে, কারোর ব্যাপারে সমকাম প্রমাণিত হলে সমকামী ও তার সঙ্গীকে শাস্তি স্বরূপ হত্যা করতে হবে। বাংলাদেশের মেজরিটি ইসলাম ধর্মের অনুসারীরা সমকামিতার মতো মাইনরিটি সমকামী অধিকার আদায়ের ব্যক্তিদের তীব্র নিন্দা ও বিরোধিতা করে আসছে। আমি মনে করি সমকামীদের হত্যা কান্ড একটি মানবাধিকারের মতো জগন্যতম অপরাধ। সমগ্র মানব সম্প্রদায় স্রষ্টার সৃষ্টি।

দুনিয়াতে সকল ভাল ও মন্দ কাজের বিচার স্রষ্টা পরকালে করে থাকবেন বলে আমরা বিশ্বাস করি। মানব হত্যা মহাপাপ সকল ধর্মেই এই নীতি বিশ্বাস করা উচিৎ বলে আমি মনে করি। বাংলাদেশে মেজরিটি ইসলাম পন্থিদের দুনিয়াতে সমকামী হত্যা কান্ডের মতো জগন্যতম অপরাধ যৌক্তিক হতে পারেনা। সমকামীদের প্রতি মুসলমান সম্পদায় যেসকল বৈষম্যমূলক নিষ্ঠুর আচরণ দেখিয়েছেন তা মানবতাবোধ ধ্বংসের জন্য উল্লেখযোগ্যভাবে দায়ী থাকবে।বাংলাদেশের মতো মুসলমান সম্প্রদায়ের এমন অমানবিক আচরণ পৃথিবীর অন্য কোন দেশে সংগঠিত হবে বলে আমার মনে হয় না।

সমকামিতার অধিকার রক্ষায় আমি আমার সার্বিক পদক্ষেপ চালিয়ে যাবো এতে যদি আমার মৃত্যুও হয় হউক” শুধুমাত্র যৌন প্রবৃত্তি ও লৈঙ্গিক পরিচয়ের কারণে বৈষম্যে বা সহিংসতার শিকার হয়নি এমন সমকামী ব্যক্তির দেখা পাওয়া খুবই কঠিন। স্বাস্থ্য সেবা থেকে শিক্ষা গ্রহণ, কর্ম প্রাপ্তি থেকে বিচার প্রাপ্তি, বিনোদন থেকে বিশ্রাম, এমনকি কারাগারেও তারা বৈষম্য ও অসম আচরণের শিকার হন। পরিবার থেকে সমাজ, সমাজ থেকে কর্মক্ষেত্র, এমন কোন স্থান নেই যেখানে বৈষম্যমূলক আইন, নীতিমালা ও অনুশীলনের মাধ্যমে সমকামী ব্যক্তিরা সহিংসতার শিকার হন না। কিন্তু পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের চিরাচরিত বৈষম্যমূলক দৃষ্টিভঙ্গি, আইন ও নীতিমালার কারনে সমকামী ব্যক্তি শত-সহশ্রবার সহিংসতা ও বৈষম্যের শিকার হলেও তা বিনা প্রতিকারে ও বিনা বিচারে থেকে যায় পর্দার অন্তরালে। তবে কি সমকামী ব্যক্তির প্রতি বৈষম্য ও সহিংসতার কোন প্রতিকার নেই