প্রাকৃতিক দূর্যোগে বিভিন্নভাবে উপকূলবাসীকে রক্ষা করে থাকে বিশ্ব ঐতিহ্য ম্যানগ্রোভ খ্যাত সুদরবন।

দেশসেবা দেশসেবা

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ২:০৮ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২৫

সুন্দরবন না থাকলে দক্ষিণ অঞ্চলের মানুষের এই অঞ্চলে টিকে থাকা সম্ভব হতো না। নানা ধরনের প্রাকৃতিক দূর্যোগের হাত থেকে রক্ষা করে সুন্দরবন। সুন্দরবনের গুরুত্ব বুঝতে পেরে এই অঞ্চলের মানুষ ভালোবাসা দিবসটিকে ‘সুন্দরবন দিবস’ হিসেবে পালন করে থাকে। ইতিমধ্যে উপকূলবাসী দিবসটি বিভিন্ন কর্মসূচীর মধ্য দিয়ে পালন করেছে।

১৪ ফেব্রুয়ারী দিনটিকে বিশ্বজুড়ে ভালোবাসা দিবস হিসেবে পালন করা হলেও সুন্দরবন উপকূলীয় জনপদের মানুষেরা ‘সুন্দরবন দিবস’ হিসেবে পালন করে থাকে। সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে খুলনাসহ উপকূলীয় দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে দুই দশক ধরে দিনটি ‘সুন্দরবন দিবস’ হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।

সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষায় নাগরিকজোট-সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা ফাউন্ডেশন বলছে, ২০০১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারী ৭০ টি পরিবেশবাদী সংগঠনের অংশগ্রহণে প্রথম জাতীয় সুন্দরবন সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেই সম্মেলনে ১৪ ফেব্রুয়ারীকে ‘সুন্দরবন দিবস’ ঘোষণা করা হয়। সুন্দরবন সমুদ্র উপকূলবর্তী নোনা পরিবেশের সবচেয়ে বড় শ্বাসমূলীয় (ম্যানগ্রোভ) বন। জীববৈচিত্র্যের প্রাচুর্যের জন্য ১৯৯২ সালে সুন্দরবনকে রামসার সাইট হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। আর ১৯৯৭ সালের ৬ ডিসেম্বর ইউনেসকো সুন্দরবনকে প্রাকৃতিক বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে ঘোষণা করে। বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হওয়ায় সুন্দরবন এখন দেশ-বিদেশের পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় এক ভ্রমণ কেন্দ্র হয়ে উঠেছে।

বন বিভাগ সুত্রে জানা গেছে , বঙ্গোপসাগরের কোলঘেঁষে অনুপম অদ্বিতীয় সুন্দরবন গড়ে ওঠেছে অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং জীববৈচিত্র্য নিয়ে। বৈজ্ঞানিক, নৃতাত্ত্বিক ও প্রত্নতাত্ত্বিক বিবেচনায় সুন্দরবন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই বনের মোট আয়তনের ৩১ দশমিক ১৫ ভাগই হচ্ছে জলাভূমি। বিশ্বের অন্যান্য ম্যানগ্রোভ বনের তুলনায় সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য অধিকতর সমৃদ্ধ। এই বনে সুন্দরীসহ রয়েছে ৩৩৪ প্রজাতির গাছপালা, ১৬৫ প্রজাতির শৈবাল ও ১৩ প্রজাতির অর্কিড। বাঘ, হরিণ, কুমির, কিং কোবারা,ইরাবতিসহ ছয় প্রজাতির ডলফিন, ৩৭৫ প্রজাতির বন্যপ্রাণী ও ২১০ প্রজাতির মৎস্য সম্পদ।

সুন্দরবনসংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা কয়রা কপোতাক্ষ কলেজের সাবেক অধ্যাপক আ, ব,ম আঃ মালেক বলেন , জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ও প্রাকৃতিক দূর্যোগে এই জনপদ এখানো টিকে আছে শুধু সুন্দরবনের আশ্রয়ে। দেশের সর্ব দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরের অববাহিকায় গড়ে উঠেছে বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন। সুন্দরবন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি-জীববৈচিত্র্যে ভরপুর। এ বনের অপরূপ সৌন্দর্য ভ্রমণপিপাসুদের হাতছানি দেয়। তবে সুন্দরবন এখন অস্তিত্ব সংকটে। কিছু মানুষের লোভ-লালসা আর অপকর্মের শিকার হচ্ছে বননির্ভরশীল মানুষ ও গোটা বনের জীববৈচিত্র্য।

বন বিভাগ বলছে, একসময় এ বনে বাস করত অন্তত ৪০০ প্রজাতির পাখি। যা কমতে কমতে এখন ২৭০ প্রজাতিতে দাঁড়িয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বাড়ছে সাগর-নদীর পানির উচ্চতা ও লবণাক্ততা। কমে যাচ্ছে সুন্দরবনের কম লবণসহিষ্ণু গাছপালা, কমছে বন্যপ্রাণীর বিচরণ ক্ষেত্রও। সমুদ্রে পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রাকৃতিক দূর্যোগ ছাড়াও পূর্ণিমা ও অমাবস্যার জোয়ারে বনের অনেক উঁচু এলাকা তলিয়ে পানিতে নষ্ট হচ্ছে বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল। এতে ব্যাহত হচ্ছে বণ্যপ্রাণীর বংশবিস্তার। উজান থেকে মিঠা পানির প্রবাহ না থাকায় মিঠা পানির স্বল্পতা দেখা দিচ্ছে বনে।

বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন ও এর জীববৈচিত্র্যকে বাঁচিয়ে রাখতে পরিকল্পনা পূর্বক সঠিক ব্যাবস্থা গ্রহণের জন্য গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার তথা যথাযথ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন উপকূলীয় জনপদের সুশিল সমাজের নেতৃবৃন্দ।