দেবহাটার সখিপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে একাধিক দূর্নীতির তদন্ত শুরু। দেশসেবা দেশসেবা ডেস্ক রিপোর্ট প্রকাশিত: ৫:১৩ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২৫ দেবহাটার সখিপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শেখ তহিরুজ্জামানের বিরুদ্ধে একাধিক দূর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগের তদন্ত শুরু হয়েছে। সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১ টায় তদন্তে আসেন জেলা শিক্ষা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মুহাঃ আবুল খায়ের। জানা গেছে, গত ১২ ফেব্রুয়ারী ৩৭.০২.৮৭০০.০০১.০০০.২৫.১৪৪ নং স্মারকে জেলা প্রশাসকের নির্দেশনার আলোকে সখিপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের তদন্তের দিন ধার্য্য করা হয়। উক্ত তদন্তে সখিপুর ইউপি চেয়ারম্যান ও ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সভাপতি সাইফুল ইসলাম, অভিযোগের বাদী, অভিযুক্ত শিক্ষক, স্থানীয় অভিভাবক, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র প্রতিনিধি, বিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র সহ বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত থেকে তদন্তে অভিযোগের বিষয়ের পক্ষে, বিপক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করা হয়। অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, সখিপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শেখ তহিরুজ্জামান অবৈধ পন্থায় সহকারী শিক্ষক থেকে প্রধান শিক্ষক পদে অধীন হন। তিনি বিগত সরকারের আমলে বিভিন্ন ব্যক্তিকে ম্যানেজ করে যোগ্য প্রার্থীদের বঞ্চিত করে অর্থের বিনিময়ে এ পদে আসেন। প্রধান শিক্ষক পদে যোগদান করে অভিভাবকদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ, অফিসে গেলে অকথ্য ভাষা ব্যবহার করেন। তার দুর্ব্যবহারে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয় থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। ইতিমধ্যে অনেক শিক্ষার্থী ও অভিভাবক বিদ্যালয় থেকে টিসি নিয়ে অন্য স্কুলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। প্রধান শিক্ষক যোগদানের পর আত্নীয়করণের মাধ্যমে অর্ধকোটি টাকা নিয়োগ বাণিজ্যে লিপ্ত হন। বিদ্যালয়ের আয়-ব্যয়, ক্রয় এবং টি আর কমিটির সদস্যদের বাদ দিয়ে তিনি নিজের ইচ্ছামত সব কিছু করেন। এমনকি তিনি শিক্ষক নিয়োগকালে অনুদানের নামে আদায় করা টাকা বিদ্যালয়ের ফান্ডে জমা না দিয়ে নিজের মত ব্যবহার করেছেন। এছাড়া নিয়োগের নামে অফিস সহকারী পদে জাকারুল ইসলামের কাছ থেকে ৩ লাখ ও আয়া পদে মরিয়ম নামে এক নারী কাছ থেকে আদায় করা ৭০ হাজার টাকা গ্রহন করেন। বিদ্যালয়ে কোন শিক্ষার্থী অনুপস্থিত থাকলে তার পরিবার বা অভিভাবকদেরকে অবহিত না করে দিন প্রতি ৫ টাকা হারে গ্রহন করে টাকা আত্নসাৎ করে আসছেন। এছাড়া চলতি বছরের গত ৩১ জানুয়ারি রাতে বিদ্যালয় থেকে ৩ ভ্যান সরকারি বই বিক্রি করে দেন। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বা ম্যানেজিং কমিটির কেউই জানেন না। পরে স্থানীয়দের হাতে একটি ভ্যান জব্দ হলেও বাকি ভ্যানগুলো আটকানো সম্ভব হয়নি। পরে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নির্দেশ মোতাবেক একটি ভ্যানের বই ফেরত দিলেও বাকি বইয়ের হদিছ পাওয়া যায়নি। স্কুলের আশেপাশে বখাটেদের উৎপাত নিয়ে একাধিকবার বলা হলেও তিনি কোন পদক্ষেপ নেননি। তার অব্যবস্থাপনায় বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা স্কুল চলাকালে পার্শ্ববর্তী দোকানে প্রকাশ্যে সিগারেট, গাঁজা সেবন করলেও এ বিষয়ে তিনি কখনো পদক্ষেপ নেননি। উঠতি বয়সী শিক্ষার্থীরা কিশোর গ্যাং এ জড়িয়ে পড়লেও বিদ্যালয় থেকে কোন ধরণের প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেননি প্রধান শিক্ষক তহিরুজ্জামান। এসব বিষয়ে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার নেতৃত্বে আসা তদন্ত টিমের সামনে অভিযোগের বিষয়ে উপস্থাপন করলে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেওয়া টাকা দিয়ে শিক্ষকরা ব্যক্তিগত ওয়াইফাই লাইনের বিল প্রদান সহ নানা কাজে ব্যবহারের যুক্তি তুলে ধরেন প্রধান শিক্ষক। কিন্তু শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেওয়া অর্থের বিষয়ে কর্তৃপক্ষের নিকট থেকে কোন প্রকার সিদ্ধান্ত না নিয়ে প্রধান শিক্ষক নিজের একক সিদ্ধান্তে এ কাজ করে যাচ্ছেন বলে প্রমাণিত হয়। এছাড়া বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছাড়া অতিরিক্ত বই নিয়ে তা পরবর্তীতে রাতের আধারে বিক্রি করার ঘটনার প্রমাণ মেলে। এছাড়া তদন্তে প্রধান শিক্ষকের অব্যবস্থাপনা, অদক্ষতার বিভিন্ন প্রমাণ মেলে। সেই সাথে বিদ্যালয়ে বিভিন্ন সময় বরাদ্দে সঠিক ব্যবহার না করে প্রধান শিকক্ষ নিজের খেয়াল খুশিমত ব্যবহার করেন বলে অভিযোগ করেন স্থানীয়রা। তদন্ত চলাকালীন অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক উপজেলা শিক্ষা অফিসারকেও টাকা প্রদান করেছেন বলে স্বীকার করেন। জেলা শিক্ষা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মুহাঃ আবুল খায়ের জানান, জেলা প্রশাসক মহোদয় আমাকে তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছে। আমি উভয় পক্ষের বক্তব্য লিখিত ভাবে জমা দিব। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিয়ে বাকি পদক্ষেপ নিবেন বলে তিনি জানান। SHARES অপরাধ ও দুর্নীতি বিষয়: