ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের অভিযোগ বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে মানববন্ধন করেছে উপজেলার সাধারণ জনগণ!

দেশসেবা দেশসেবা

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ৫:১৭ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২৫

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলায় তিতাস নদে ড্রেজার ও এক্সকাভেটর দিয়ে বালু উত্তোলন ও মাটি কাটার ফলে কৃষিজমির ক্ষতি হচ্ছে জানিয়ে এলাকাবাসী মানববন্ধন করেছেন। সোমবার   দুপুরে উপজেলার বুধন্তি ইউনিয়নের শশই গ্রামের তিতাস নদের পাড়ে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।মানববন্ধনে ভুক্তভোগী কৃষক ও স্থানীয় বাসিন্দারা ব্যানার, প্ল্যাকার্ড নিয়ে অংশ নেন। এসব প্ল্যাকার্ডে ‘জমিন থাকলে কৃষক বাঁচবে’, ‘মুখের ভাত কেড়ে নেবেন না’, ‘বুকের ওপর ড্রেজার চলাবেন না’, ‘কৃষক বাঁচলে দেশ বাঁচবে’ লেখা ছিল। মানববন্ধনে বুধন্তি ইউপি সদস্য হাবিবুর রহমান, উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মিজানুর রহমান, ইউনিয়ন বিএনপির সহসভাপতি আজিজুল ইসলাম, সহসাংগঠনিক সম্পাদক নাসির উদ্দিন ও সামসুল ইসলাম, সদস্য ফজল মিয়া, সৈয়দ মিয়া, ইউনিয়ন শ্রমিক দলের সহসভাপতি নাজমুল ইসলাম, সাবেক ইউপি সদস্য সামসু মিয়া ও সোলায়মান মিয়া, স্থানীয় বাসিন্দা আবদুল আমিন সরদার, শরিফুল ইসলাম, জিল্লুর রহমান প্রমুখ বক্তব্য দেন। বক্তারা বলেন, উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আসাদুজ্জামান ও চমক, বুধন্তি ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাইয়ূম ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হেলাল মিয়া, উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মিয়া ইয়ার মোহাম্মদ খালেদ রাসেল, বুধন্তি ইউনিয়ন যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমানসহ একটি প্রভাবশালী মহল নদ থেকে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করছেন। তাঁরা বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে এসব বালু বিক্রি করছেন। এ ছাড়া নদের পাড় থেকে এক্সকাভেটর দিয়ে মাটি কেটে নিচ্ছেন। এতে কৃষিজমির ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। এভাবে বালু তোলা ও মাটি কাটা অব্যাহত থাকলে কৃষিজমি নদে বিলীন হয়ে যাবে। এসবের প্রতিবাদ জানালে তাঁরা মামলার ভয় দেখাচ্ছেন। শশই গ্রামের বৃদ্ধ জাহানারা বেগম বলেন, ‘গাঙ্গের পাড়ে আমার খেত। এই জমিটা কইরা আমি খাই। আমার জামাই অন্ধ, চোহে দেহে না। বালু নিলে আমার খেতটা ভাইঙ্গা পইড়া যাইব গা। আমি কী দিয়া খামু, কেমনে জান বাঁচামু। আমি জান দিতে রাজি, বালু দিতে রাজি না।’ সাবেক ইউপি সদস্য সোলায়মান মিয়া বলেন, ‘তারা হুমকি দিয়া ও হয়রানি করে অপরিকল্পিতভাবে বালু তুলতেছে। কিছু বললেই চাঁদাবাজির মামলা দিয়ে দেয়। আমরা এখান থেকে বালু তুলতে দেব না। শশই গ্রামের লোকজন মরে যাবে, কিন্তু বালু তুলতে দেবে না।’ এদিকে ৫ ফেব্রুয়ারি তিতাস নদে বালু ও মাটি উত্তোলন বন্ধে জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত আবেদন করেন বুধন্তি ইউপির প্যানেল চেয়ারম্যান এমরানুল ইসলাম, ইউপি সদস্য হাবিবুর রহমান ও স্থানীয় বাসিন্দা খাবির রহমান। আবেদনে উল্লেখ করা হয়, বুধন্তি ইউনিয়নের শশই গ্রামের পশ্চিম দিকে তিতাস ও সোনাই নদে অবস্থিত। ফেব্রুয়ারির শুরু থেকে রাত-দিন স্থানীয় কিছু লোক তিতাস নদ থেকে বড় ড্রেজারের মাধ্যমে বালু উত্তোলন করে বড় নৌকায় নিয়ে যায়। পাশের সোনাই নদে পাড়ের মাটি এক্সকাভেটর দিয়ে কেটে অন্যত্র নিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে। অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আসাদুজ্জামান আসাদ  বলেন, ‘ছয় লেনের সড়কের কাজের জন্য পিডিএল নামের একটি কোম্পানি বালু উত্তোলনের আবেদন করেছে। পরিবেশ অধিদপ্তর ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ছাড়পত্র নিয়ে মাটি পরীক্ষা করে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে বালু উত্তোলনের অনুমতি দিয়েছে সরকার। ঢাকার ফুরপুরি ট্রেডার্স নামের একটি প্রতিষ্ঠান বালু উত্তোলনের দায়িত্ব পেয়েছে। এডিসি-ইউএনও তাদেরকে সহায়তার করার জন্য আমাদের বলেছেন। পিডিএল কোম্পানি, বালু ও মাটির ব্যবসার সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। শশই গ্রামের দু-চারজনকে সরকারি কাজে বাধা না দিতে বলেছি।’ তিনি বলেন, ‘জেলায় বিএনপির রাজনীতিতে দুটি পক্ষ। কাদা–ছোড়াছুড়ি হচ্ছে। একটি পক্ষ রাজনৈতিক ফায়দা নিতে আমাদেরকে এটির সঙ্গে জড়িয়ে ঘায়েল করতে চাচ্ছে।’ তবে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মনজুর রহমান  বলেন, ‘বিজয়নগরে তিতাস নদে আমাদের খননের কোনো প্রকল্প নেই।’ বিজয়নগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাধনা ত্রিপুরা বলেন, ‘মহাসড়কের কাজের জন্য পিডিএল নামের একটি কোম্পানি আবেদন করে সেখান থেকে বালু উত্তোলন করছে। আর গ্রামবাসী কোনো আবেদন বা লিখিত অভিযোগ আমাদের কাছে করেনি। জেলা প্রশাসন থেকেও অভিযোগের কোনো অনুলিপি আমাদের কাছে আসে নি। সাধারণ মানুষ দাবি তাদের অন্ন জোগান এর   অন্যতম কৃষি জমি   এইভাবে নদীতে মিশে যাবে তাদের চোখের সামনে তারা বেঁচে থাকতে এটা কখনোই হতো দিবে না, তাই প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তারা মানববন্ধন করে! সুষ্ঠু  তদন্ত করে  দোষীদের আইনের আওতায় আনার জন্য জোরদার দাবিদার উপজেলার সাধারণ  জনগন প্রতিনিধিরা!