ওসমানীনগরে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামীণ ঐতিহ্য ও হস্তশিল্প দেশসেবা দেশসেবা ডেস্ক রিপোর্ট প্রকাশিত: ৪:৪৩ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ১, ২০২৫ শরীফ আহমদ চৌধুরী ।। এক সময়ের ঐতিহ্যবাহী ওসমানীনগর উপজেলার গ্রামীণ জনপদে নানা ধরণের হস্তশিল্প ও কৃষি-নির্ভর উপকরণ ছিল প্রতিটি বাড়ির অবিচ্ছেদ্য অংশ। প্রয়োজনীয়তা ছাপিয়ে এসব উপকরণ হয়ে উঠেছিল এখানকার সংস্কৃতির প্রতীক ও ঐতিহ্যের ধারক। তবে কালের পরিক্রমায়, আধুনিক যন্ত্রপাতির দাপটে ও গ্রামীণ জীবনের পরিবর্তিত চিত্রে এসব ঐতিহ্যবাহী উপকরণ আজ বিলুপ্তপ্রায়। এক সময় কৃষকের মাঠের অবিচ্ছেদ্য সঙ্গী ছিল লাঙল ও বলদ। সেইসঙ্গে হালের কাজে ব্যবহৃত হতো জোয়াল—যা দুই বলদের ঘাড়ে বসিয়ে জমি চাষ করা হতো। বর্তমানে আধুনিক ট্রাক্টর ও পাওয়ার টিলার কৃষিকাজে জায়গা করে নেওয়ায় এই ঐতিহ্যবাহী উপকরণগুলো এখন কেবল স্মৃতির পাতায় ঠাঁই পেয়েছে। একইভাবে রাতের অন্ধকার দূর করতে হারিকেন, কুপি ও কুইন লাইট ছিল এক সময়ের ভরসা। বিদ্যুৎ না থাকলেও এই আলো গৃহস্থ বাড়িগুলোকে আলোকিত করত। এখন এলইডি লাইট ও সোলার লাইটের যুগে এসব আলোক সরঞ্জাম কেবল সংগ্রহশালার প্রদর্শন সামগ্রী হয়ে উঠছে। তালের পাতা ও বাঁশ-বেত দিয়ে তৈরি হরেক রকমের হস্তশিল্প—যেমন ছাতা, চালুনি, খাঁচা, খলই, চাচ, ডালি, মই প্রভৃতি—এক সময় ঘরে ঘরে তৈরি হতো। এগুলো শুধু দৈনন্দিন ব্যবহারের জিনিস ছিল না, বরং উৎসব ও সামাজিক আচার-অনুষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ ছিল। কিন্তু প্লাস্টিক ও ধাতব সামগ্রীর সহজলভ্যতা এই শিল্পের কদর একেবারে কমিয়ে দিয়েছে। মাটির কলস, হাড়ি-পাতিল, ঘড়া ও রান্নার মাটির চুলা এক সময় প্রতিটি বাড়ির রান্নাঘরের অন্যতম অনুষঙ্গ ছিল। বর্তমানে এসবের জায়গা দখল করেছে অ্যালুমিনিয়াম, স্টিল ও প্লাস্টিকের তৈরি আধুনিক সামগ্রী। এর ফলে কুমারদের ঐতিহ্যবাহী শিল্পচর্চাও চরম সংকটে পড়েছে। অনেক কুমার পরিবার এখন পেশা বদল করতে বাধ্য হচ্ছে। স্থানীয় প্রবীণদের মতে, ওসমানীনগরের এই নিজস্ব পণ্য, প্রযুক্তি ও হস্তশিল্প শুধু ব্যবহার্য সামগ্রী নয়, বরং আমাদের ইতিহাস, সংস্কৃতি ও শিকড়ের পরিচায়ক। এগুলোর অবলুপ্তির মাধ্যমে হারিয়ে যাচ্ছে একটি জনগোষ্ঠীর পরিচয় ও লোকজ ঐতিহ্য। বিশেষজ্ঞদের মতামত অনুযায়ী, হারিয়ে যেতে বসা এই ঐতিহ্য রক্ষা করতে প্রয়োজন বহুমাত্রিক উদ্যোগ। এর মধ্যে রয়েছে— শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লোকজ সংস্কৃতি সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি, স্থানীয়ভাবে হস্তশিল্প প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন, গ্রামীণ হেরিটেজ কর্নার ও মিউজিয়াম গড়ে তোলা, এবং সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে গবেষণা ও অর্থনৈতিক সহায়তা প্রদান। উন্নত বাংলাদেশ গঠনের স্বপ্ন বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে গ্রামীণ ঐতিহ্য ও হস্তশিল্প সংরক্ষণ হতে পারে একটি শক্তিশালী ভিত্তি। এজন্য জরুরি, ওসমানীনগরের হারিয়ে যাওয়া পেশা, উপকরণ ও শিল্পকে তথ্যভিত্তিকভাবে নথিভুক্ত করে একটি বাস্তবমুখী পুনর্জাগরণ পরিকল্পনা গ্রহণ করা। সচেতনতা, সংরক্ষণ এবং সৃজনশীল উদ্যোগের মাধ্যমেই রক্ষা করা সম্ভব ওসমানীনগরের এই অতীত ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির শিকড়। SHARES সারা বাংলা বিষয়: