করোনাভাইরাস আক্রান্ত এলাকার মানুষের জন্য রাসুলুল্লাহ সাঃ এর নির্দেশনা ও দোয়া

দেশসেবা দেশসেবা

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১২:৪১ অপরাহ্ণ, মার্চ ২৩, ২০২০

।। আহমদুল হক ।। 

সম্পাদকীয় কলাম 

ভাইরাস আক্রান্ত এলাকা থেকে যেমন কেউ পালিয়ে অন্যত্র যাবে না তেমনি বাহিরের অঞ্চল থেকেও ভাইরাস আক্রান্ত এলাকায় যাওয়া ঠিক নয়। প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিষয়টি সুস্পষ্ট করেছেন। হাদিসে এসেছে-

قال صلى الله عليه وسلم في الطاعون: (إذا سمعتم به بأرض فلا تقدموا عليه، وإذا وقع بأرض وأنتم بها فلا تخرجوا فرارا منه) متفق عليه

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যখন কোনো এলাকায় মহামারি ছড়িয়ে পড়ে তখন যদি তোমরা সেখানে থাকো তাহলে সেখান থেকে বের হবে না। আর যদি তোমরা বাইরে থাকো তাহলে তোমরা সেই আক্রান্ত এলাকায় যাবে না।
এ সবই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নির্দেশ। এ নির্দেশ পালনে কারণ না খুঁজে প্রথম তার নির্দেশ পালন করাই মুসলমানের অন্যতম কাজ।’

ইসলাম সব বিষয়ই মধ্যপন্থা শিক্ষা দেয়। মহামারির ক্ষেত্রে মধ্যপন্থা তাই যা প্রিয়নবি ঘোষণা করেছেন। বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর এ নির্দেশের কারণ ব্যাখ্যা করেছেন ওলামায়ে কেরাম। তারা বলেছেন->> ‘যদি মহামারী আক্রান্ত এলাকার লোকজন পলায়ন করে অন্যত্র চলে যায় তবে যে সব লোক মহামারীতে আক্রান্ত হয়েছেন তাদের সেবা-শুশ্রূষা কে করবেন?>> সম্পদশালী ব্যক্তিরা পালিয়ে যেতে সক্ষম হলেও গরিব অসহায় ব্যক্তিরাতো পালাতে সক্ষম হবে না।>> যদি কেউ মনে করে যে, তাকে এ ভাইরাস বা রোগে এখনও আক্রমণ করেনি, তাই সে পালিয়ে যাবে। আর যদি ওই ব্যক্তি আক্রান্ত হয়ে যায়, তবে সে যে এলাকায় যাবে সে এলাকার মানুষও তার মাধ্যমে সংক্রমিত হবে।>> আবার অন্য এলাকা থেকে যদি কোনো সুস্থ মানুষ আক্রান্ত এলাকায় আসে তবে সেও এ ভাইরাস বা মহামারীতে আক্রান্ত হয়ে যেতে পারে।

সুতরাং মুমিন মুসলমানসহ সব মানুষেরই প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এ হাদিসের ওপর আমল করাই শ্রেয়।

আর যারা আল্লাহ তাআলার উপর অগাধ আস্থা এবং বিশ্বাস রাখে, সেসব লোকের পায়ে যদি কোনো কাটাও ফুটে, তবে তারা আল্লাহর কাছে এর বিনিময় পাবে। সুতরাং যারা মাহামারীর ভয়াবহ অবস্থায় আল্লাহর উপর ভরসা করে ধৈর্য ধারণ করবে তাদের জন্য এটি মহামারি নয়। এদের জন্য এটি আল্লাহর রহমত। এর মাধ্যমে তাদের গোনাহ মাফ করে দেবেন।

সব সময় এ দোয়াটি পড়া-اَللَّهُمَّ اِنِّىْ اَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْبَرَصِ وَ الْجُنُوْنِ وَ الْجُذَامِ وَمِنْ سَىِّءِ الْاَسْقَامِউচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল বারাচি ওয়াল জুনুন ওয়াল ঝুজাম ওয়া মিন সায়্যিল আসক্বাম।’ (আবু দাউদ, তিরমিজি)অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আপনার কাছে আমি শ্বেত রোগ থেকে আশ্রয় চাই। মাতাল হয়ে যাওয়া থেকে আশ্রয় চাই। কুষ্ঠু রোগে আক্রান্ত হওয়া থেকে আশ্রয় চাই। আর দূরারোগ্য ব্যাধি (যেগুলোর নাম জানিনা) থেকে আপনার আশ্রয় চাই।’

তিরমিজিতে এসেছে, আরও একটি দোয়া পড়তে বলেছেন বিশ্বনবি-اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ مُنْكَرَاتِ الأَخْلاَقِ وَالأَعْمَالِ وَالأَهْوَاءِ وَ الْاَدْوَاءِউচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন মুনকারাতিল আখলাক্বি ওয়াল আ’মালি ওয়াল আহওয়ায়ি, ওয়াল আদওয়ায়ি।’অর্থ : হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি তোমার কাছে খারাপ (নষ্ট-বাজে) চরিত্র, অন্যায় কাজ ও কুপ্রবৃত্তির অনিষ্টতা এবং বাজে অসুস্থতা ও নতুন সৃষ্ট রোগ বালাই থেকে আশ্রয় চাই।’ (তিরমিজি)

রোগীকে দেখে রাসুলুল্লাহ সাঃ যে দোয়া পড়বেন

الحمد لله الذي عافاني مما ابتلاك به وفضلني على كثير ممن خلق تفضيلا
আলহামদু লিল্লাহিল্লাজি আ-ফানি মিম্মাবতালাকা বিহি ওয়া ফাদদলানি আলা কাছিরিম মিম্মান খলাকা তাফদিলা।’

অর্থ : ‘সকল প্রশংসা আল্লাহ তাআলার, তিনি তোমাকে যে ব্যাধিতে আক্রান্ত করেছেন, তা থেকে আমাকে নিরাপদ রেখেছেন এবং তার অসংখ্য সৃষ্টির ওপর আমাকে সম্মান দান করেছেন।’

ফজিলত : যে ব্যক্তি কোনো রোগীকে দেখলে এই দোয়া পড়বে, ইনশাআল্লাহ সে ওই রোগে কখনো আক্রান্ত হবে না। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি কোনো রোগাক্রান্ত বা বিপদগ্রস্ত লোককে প্রত্যক্ষ করে বলে, ‘সকল প্রশংসা আল্লাহ তাআলার, তিনি তোমাকে যে ব্যাধিতে আক্রান্ত করেছেন, তা হতে আমাকে নিরাপদ রেখেছেন এবং তার অসংখ্য সৃষ্টির ওপর আমাকে সম্মান দান করেছেন’, সে ওই ব্যাধিতে কখনো আক্রান্ত হবে না।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৩৪৩২

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে করোনাভাইরাসসহ যাবতীয় মহামারীতে ইসলামের দিক-নির্দেশনা মেনে চলার তাওফিক দান করুন। হাদিসের ওপর যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।