অর্থ আত্মসাত করে নৈশ্য প্রহরী লাপাত্তা

দেশসেবা দেশসেবা

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ৪:৩১ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২৪

শরীফ আহমদ চৌধুরী।সিলেটের ওসমানীনগরে সরকারি অর্থায়নে টিউবওয়েল, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থদের চালের টিন দেয়ার নাম করে হতদরিদ্র মানুষের কাছ থেকে অর্থ আত্মসাৎ করে লাপাত্তা হয়েছেন ওসমানীনগর উপজেলা পরিষদের নৈশ্য প্রহরী মোরদ হোসেন। দীর্ঘদিন থেকে উপজেলা কার্যালয়ের কাউকে কিছু না বলে লাপাত্তা রয়েছেন তিনি। যোগদানের পর থেকেই বিভিন্ন পন্থায় সরকারি অর্থ লুটপাটসহ নানা দূর্নীতির অভিযোগ রয়েছে নৈশ্য প্রহরী মোরাদের বিরুদ্ধে। মোরাদ হোসেন কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব উপজেলার বাদে হস্তিদুর গ্রামের ফয়জুল হকের ছেলে। সে ২০১৬ সাল থেকে ওসমানীনগর উপজেলা পরিষদে নৈশ্য প্রহরী হিসাবে দ্বায়িত্ব পালন করছিলেন। নৈশ্য প্রহরীর দ্বায়িত্ব থাকলেও তিনি ছিলেন উপজেলা পরিষদের অলিখিত অফিসার। কার্যালয়ের বিভিন্ন কক্ষে অফিস করে জনসাধারণকে ধোকা দিয়ে ইউএনওর সহকারী বলে পরিচয় দিয়ে আসছিলেন।

উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে টিউবওয়েল, টিনসহ নানা উপকরণ দেয়ার নাম করে স্থানীয় ইউপি সদস্য ও উপজেলা পরিষদে তৃতীয়- চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের নিয়ে গড়ে তুলে ছিলেন সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিডকেটের মাধ্যমে দ্বায়িত্বে থাকা কালে নানা ভাবে প্রলোভন দেখিয়ে অর্থ আত্মসাৎই ছিলো তার মূল লক্ষ্য। এসব বিষয় নিয়ে একাধিকবার প্রতিবাদ হলেও স্থানীয় আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতাদের সেল্টারে ধাপট খাটিয়ে নানা অনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনা করে আসছিলেন তিনি। টাকা আত্মসাৎ করে পালিয়ে যাওয়ায় ইউপি সদস্যসহ ভূক্তভোগীরা তাদের টাকা ফিরে পেতে দীর্ঘদিন উপজেলা পরিষদে গেলেও কোন সুফল পাননি। মোরাদ কোথায় আছে এই বিষয়ও জানেন না উপজেলা পরিষদের কর্মকর্তারা।
তবে, একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে অর্থ আত্মসাৎ করে মোরাদ প্রবাসে পালিয়ে গেছেন। কোন দেশে মোরাদ অবস্থান করছেন তা নিশ্চত করতে পারেনি।

মোরাদের খালাত ভাই পরিচয় দিয়ে(০১৩০২৭৭৭৪৩৮) এই নাম্বার থেকে স্থানীয় এক সাংবাদিককে কল দিয়ে অর্থ আত্মসাৎ এর কথা স্বীকার করে ১৫ জনের অর্থের তালিকা মোরাদ তার কাছে দিয়ে গেছে বলে তিনি দাবি করেন। শিগ্রীই এসব মানুষের অর্থ ফেরৎ দেয়ার আশ্বাস দিলেও বিগত ২ মাস থেকে এই ফোন নাম্বরটি বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, গোয়ালাবাজার ইউনিয়নের ইলাশপুর গ্রামের মোহন মিয়ার কাছ থেকে ২৫ হাজার, উমরপুর ইউনিয়নের মান্দারুকা গ্রামের পেয়ারা বেগমের কাছ থেকে ১০হাজার ৫শ, ইউপি সদস্য হুসনা বেগমের কাছ থেকে ২০ হাজার, গোয়ালাবাজার ইউনিয়নের ইউপি সদস্য লেবু মিয়ার কাছ থেকে ৯০ হাজার, মহিলা ইউপি সদস্য চামেলী ধর এর কাছ থেকে ৩২ হাজারসহ প্রায় অর্ধ শতাধিক রাজনৈতিক নেতা, দারিদ্র মানুষের কাছ থেকে প্রায় কয়েক লক্ষাধিক টাকা আত্মসাৎ করে মোরাদ।

ভূক্তভোগী পেয়ারা বেগম বলেন, কয়েক মাস আগে উপজেলা চেয়ারম্যানের কাছে টিউবওয়েলের জন্য লিখিত আবেদন নিয়ে গেলে নৈশ্য প্রহরী মোরাদ হোসেন বলেন আমার কাছে আবেদন দিয়ে যান, আমি আপনার এটা জামা দিব। কিছু দিন পর মোরাদ হোসেন মোবাইল ফোনের মাধ্যমে আমাকে বলে টিউবওয়েলের জন্য দশ হাজার ৫শত টাকা জামা দিতে হবে।
টাকা নিয়ে উপজেলা পরিষদের দু-তলায় গেলে মোরাদ এগিয়ে এসে বলে আপনার টিউবওয়েল হয়ে গেছে, টাকা দেন। তখন মোরাদকে রশিদ দেয়ার কথা বললে সে ধমক দিয়ে বলে আমি সরকারি চাকরী করি আপনার সামান্য টাকায় আমার লোভ নেই।

তার হাতে নগদ ১০ হাজার ৫শ টাকা দিলে সে বলে কালকে আপনাকে জানাচ্ছি। দুই দিন পর মোরাদের ফোন নাম্বারে কল দিলে সে আবারো জানায় আরো ১৫দিনপর টিউবওয়েল আপনার বাড়িতে পাবেন। এ তারিখ করার কয়েক মাস হয়ে গেছে আমার টিউবওয়েল কিংবা টাকা কিছুই পাইনি। শুনছি সে অনেক মেম্বার ও সাধারণ মানুষের টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছে। আমরা গরীব মানুষ, সরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত থেকে এমন প্রতারণার সুষ্ট বিচার চাই।এসব অভিয়োগের বিষয়ে জানতে চাইলেও লাপাত্তা হওয়ায় মোরাদ হোসেন বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।ওসমানীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনুপমা দাশ বলেন, মোরাদ অনেক দিন থেকে পলাতক, তাকে পাওয়া যাচ্ছে না। অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, টিউবওয়েলের জন্য মোরাদকে কেন টাকা দিবে? এটার একটা সরকারি প্রসেস আছে। যদি মোরাদ অনৈতিক কর্মকান্ড করে থাকে, এর দায় সরকার নিবে না। মোরাদ সরকারি নিয়োমিত নিয়োগের নয়। আউটসোর্সিং নিয়োগ যেটা কোম্পানির মাধ্যমে হয়ে থাকে।