আফসোস: আমাদের একজন তাকী উসমানিও নেই-সৈয়দ শামছুল হুদা

দেশসেবা দেশসেবা

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১০:৩৮ অপরাহ্ণ, মার্চ ২৩, ২০২০

পাকিস্তানের সাবেক বিচারপতি, মুফতি শফি রহ. এর সুযোগ্য সাহেবজাদা, আল্লামা তাকি উসমানি দামাত বারাকাতাহুম বর্তমান বিশ্বের গৌরব। সমসাময়িক বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেওয়ার ক্ষেত্রে তাঁর সমকক্ষ এই মুহুর্তে আর কেউ নেই। করোনা ভাইরাস নিয়ে তাঁর প্রতিটি বক্তব্য সময় এবং বাস্তবতার আলোকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাঁর ব্যক্তিত্ব ও ইলমি গভীরতা এতটাই প্রভাব বিস্তার করেছে যে, শুধু পাকিস্তানের সরকারই নয়, সারা বিশ্বেই তাঁর গ্রহনযোগ্যতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর এ জন্যই তাঁর জীবন খুব ঝুঁকিপূর্ণ। কতিপয় আবেগি মানুষ, ঈর্ষাপরায়ণ অপশক্তি তাঁর জীবন ছিনিয়ে নিতে চায়।

মুফতি তাকি উসমানি একদিকে লেখক, গবেষক, প্রজ্ঞাপূর্ণ আলোচক। জীবন ও জগত সম্পর্কে সবসময়ই সচেতন। তিনি তাঁর যোগ্যতাকে ইতিমধ্যেই সারাবিশ্বের জ্ঞান পিপাসুদের কাছে পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছেন। চলমান সময়ের যে কোন সংকট, হোক সেটা ধর্মীয়, হোক সেটা রাজনীতির বিষয় অথবা বিজ্ঞান কিংবা অর্থনীতির বিষয়। সব বিষয়েই তিনি মতামত দিচ্ছেন। মানুষের ইলমি চাহিদা পূরণে তিনি সফর করছেন দেশের পর দেশ। আর সেখান থেকেও তুলে আনছেন মণি-মুুক্তো।

আল্লামা তাকি উসমানি, যার দেওয়া যে কোন সিদ্ধান্ত পাকিস্তানের শুধু আলেম সমাজই নয়, রাষ্ট্রও গ্রহন করতে কোন প্রকার দ্বিধা করে না। সংকোচ বোধ করে না। আলেম-উলামা, সাধারণ মানুষ সকলেই তাঁর বক্তব্যের ওপর নির্ভর করেন। তাঁর দেওয়া সিদ্ধান্তকে সমীহ করেন। মান্য করেন। তিনি কোন বিষয়ে মতামত দিলে সেটা নিয়ে পাকিস্তানের কোন আলেম ট্রলবাজি করে না। রাষ্ট্র তামাশা করে না।

কিন্তু আফসোসের বিষয় হলো, আমাদের প্রিয় বাংলাদেশে এত মুফতি, এত শায়খুল হাদীস, এত আল্লামা, কিন্তু একজনও তাকি উসমানি নেই। তাকি উসমানির মতো গ্রহনযোগ্যতা কারো নেই। ভারসাম্যপূর্ণ ইলম, ভারসাম্যপূর্ণ মেজাজ, ভারসাম্যপূর্ণ গ্রহনযোগ্যতা, ভারসাম্যপূর্ণ ব্যক্তিত্ব বাংলাদেশের একজনেরও নেই। হয়তো কারো ইলম আছে কিন্তু কোন গবেষণা নেই, গবেষণা আছে, কিন্তু বক্তব্য বা কোন বিষয় সময়ের ভাষায় ফুটিয়ে তোলার যোগ্যতা নেই। অনেক বড় আলেম, কিন্তু জগত সম্পর্কে কোন ধারণা রাখেন না। রাজনীতির মারপ্যাচ কিছুই বুঝেন না। বিদেশের সাথে কোন প্রকার যোগাযোগ নেই। বিশ্বব্যাপী ইসলামিক স্কলার, বা বিশ্বব্যাপী যে ইন্টেলেকচুয়াল কাজ হয় তার সাথে কোন প্রকার সম্পৃক্ততা নেই। নিজেদের ঘরানার চৌহদ্দীর বাইরে যাওয়ার কোন ইচ্ছাও নেই। হযতো ভালো কিতাব বুঝেন, কিন্তু কোন বিদেশি ভাষাতেই পারদর্শিতা নেই। আরবি বুঝলেও বলতে পারেন না। আধুনিক আরবি পরিভাষা সম্পর্কে ধারণা রাখেন না। ইংরেজি ভাষা বুঝেন না, বলতে পারেন না। অথচ এর সবগুলো গুণই আল্লামা তাকি উসমানির রয়েছে।

অনেকের কাছে খারাপ লাগলেও এটা আমার কাছে মনে হয় যে, মাওলানা ফরিদ উদ্দীন মাসউদ কিছুটা হলেও সেই মানের যোগ্যতা রাখেন। তাঁর বর্হিবিশ্বে যেমন কিছুটা পরিচিতি রয়েছে, তেমনি ব্যক্তিত্বের ভারসাম্য রয়েছে। অনেক বিষয়ে কওমী মাদ্রাসার অন্যান্য আলেমদের সাথে তাঁর মতদ্বৈততা, রাজনৈতিক বিষয়ে তাঁর একমুখিতা অনেকটা বিতর্কের সৃষ্টি করলেও ব্যক্তিত্ব বিভায় তিনি মহিমান্বিত।

বাংলাদেশে এমন একজন আলেম কবে পাবো, যিনি কথা বললে তার মুখের ওপর দ্বিতীয় কেউ কথা বলার সাহস পাবে না। তিনি কোন বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিলে সেটাই হবে চূড়ান্ত। তিনি অতি আবেগি হবেন না। তিনি বয়সের ভারে ন্যুজ হবেন না। তিনি তথাকথিত খাদেম-শাগরিদ দ্বারা পরিচালিত হবেন না। জীবন সায়াহ্নে এসে জাতির হাল ধরবেন না। যার নিজের চোখ কান খোলা থাকবে সবসময়। তিনি ভালো আরবি বুঝবেন, ভালো আরবি বলতে ও লিখতে পারবেন, তিনি ভালো ইংরেজিও জানবেন। তিনি মিডিয়াবাজিও বুঝবেন, তিনি রাজনীতির ভেলকিবাজিও বুঝবেন। আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান সম্পর্কেও ধারণা রাখবেন। বিশ্বের অন্যান্য ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামিক চিন্তাবিদদের কাছে গ্রহনযোগ্যতা পাবেন। তিনি যা চিন্তা করেন তা জাতির সামনে লিখিত আকারে পেশ করতে থাকবেন।

হে আল্লাহ! আমাদেরকে এমন একজন দায়িত্বশীল, বুঝমান রাহবারের সন্ধান দাও। জাতির প্রতিটি সংকটকালে যিনি নেতৃত্ব দিয়ে যাবেন যোগ্যতার সাথে। প্রতিটি বিষয়ের এমন সমাধান দিবেন যা নিয়ে কোন ট্রলবাজি কেউ করার সাহস পাবে না। যার ধমকে থমকে যাবেন অন্য সব আলেম। যার সিদ্ধান্ত মানতে বাধ্য হবে সরকার। প্রশাসন। জনগণ।