পানি উন্নয়ন বোর্ডের উদাসীনতায় গোলাপগঞ্জের শরীফগঞ্জ ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম নদীগর্ভে চলে যাবার সম্ভবনা

দেশসেবা দেশসেবা

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ২:০১ অপরাহ্ণ, মে ১৭, ২০২৫

আজিজ খান।।

বিগত বন্যায় গোলাপগঞ্জে কুশিয়ারা নদীতে “রাম পুর হইতে বসন্তপুর পর্যন্ত” ব্লকগুলো সংস্কারের অভাবে রামপুর, কদুপুর, বসন্তপুর গ্রামের বিভিন্ন স্থানের ব্লক গুলো নদীর গর্ভে চলে যাচ্ছে। আবার কোথাও কোথাও নদীরপাড়ের বিভিন্নস্থানে এলোমেলো ভাবে বিক্ষিপ্তভাবে রয়েছে ব্লকগুলো। সংস্কারের অভাব এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের উদাসীনতায় কারনে প্রায় ৬ কোটি টাকায় নির্মিত কুশিয়ারা নদীর ভাঙ্গঁন হইতে রক্ষা প্রকল্পের সরকারি এ সম্পদ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের খামখেয়ালীতায় পূর্বের মত নদী ভাংগন সৃষ্টি হয়ে এ ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রাম নদীগর্ভে চলে যাবার সম্ভবনা রয়েছে বলে মনে করেন এ এলাকার মানুষ। এতে ঘর-বাড়ি হারাবে কয়েক শতাধিক পারিবার। অথচ দেখার কেউ যেন নেই। এ জনপদকে রক্ষার ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের নেই কোনো উদ্যোগ।

ভাঙন রোধে ব্লকগুলো সংস্কারের জন্য এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে শরীফগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গত ১৮ ফেব্রুয়ারী বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড, উত্তর পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী বরাবরে আবেদন করেন। আবেদনের দীর্ঘদিন পরও সংশ্লিষ্টরা নদীর তীর ভাঙন রোধে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বরং আজ নয় কাল আস প্রতিনিয়ত এসব বলে আসছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোন কোন কর্মকর্তারা। অথচ প্রায়ই ৩০ বছর পূর্বে শরীফগঞ্জ ইউপির ৯নং ওয়ার্ডের কদুপুর,বসন্তপুর ও রামপুর গ্রামগুলো নদীভাঙ্গনে বিলীন হয়ে যায়। এসময় প্রায় ৪০০ কিয়ার জায়গা নদীগর্ভে বিলীন বা সিকস্থি হয়ে গেছে। তারপর এসব এলাকার মানুষ নতুনভাবে আবাদী জমি ভরাট করে। বসত ভিটা তৈরি করে বসবাস করে আসছে। অথচ ঐসব এলাকা থেকে হাকালুকি হাওড় পারের দূরত্ব ৬০০ থেকে ৭০০ মিটার। আবারও নতুন করে নদী ভাঙ্গণে এসব এলাকা নদীগর্ভে চলে গেলে হাকালুকি হাওড়ের সাথে মিলিত হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। এতে করে পূর্বের মত কুদুপুর-বসন্তপুর গ্রামের বসতবাড়ী, দোকান-পাট, মসজিদ, মাদ্রাসা, হাট-বাজার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অস্থিত বা কোন নাম নিশানা থাকবে না।সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ভাঙন রোধে ২০০৭ সালে তৎকালীন চারদলীয় জোট সরকারের সময় সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের সহায়তায় শরীফগঞ্জ ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা এমএ মুছাব্বির সাহেবের প্রচেষ্টায় সিলেটের গোলাপগঞ্জ ও ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার কদুপুর, বসন্তপুর, মানিকোনা, বেলকোনা ও মঈনপুর এলাকায় ‘কুশিয়ারা নদীর ভাঙ্গঁন হইতে রক্ষা প্রকল্প’ নামে প্রায় ১৩ কোটি ২২ লক্ষ টাকার প্রকল্প অনুমোদন করা হয়। এর মধ্যে শরীফগঞ্জ ইউনিয়নে কুশিয়ারা নদীর বামতীরে প্রায় ৮ কোটি ২০ লক্ষ টাকায় নির্মিত কাজের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন চেয়ারম্যান এমএ মুছাব্বিরকে সাথে নিয়ে তৎকালীন প্রাইভেটাইজেশন কমিশনের চেয়ারম্যান ইনাম আহমদ চৌধুরী। এরপর থেকে উন্নয়নের ফ’লঝুরি ফোটালে বাস্তবে কুশিয়ারা নদীর তীরে ছিটেফোঁটা উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। এ কারণে হুমকির মুখে ও আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন এসব এলাকার লোকজন।এ ব্যাপারে ওই এলাকার বাসিন্দা বিশিষ্ঠ রাজনীতিবীদ আব্দুল আজিজ, দেলওয়ার হোসেন শাহিন, শওকত আলী, সিরাজুল ইসলাম, শিহাব উদ্দিন সহ একাধিক ব্যক্তিরা বলেন, গত বন্যার পানির কারণে ব্লকগুলো ধসে গেছে। এক সময় হয়ত বসতবাড়ী, দোকান-পাট, মসজিদ, মাদ্রাসা ও হাট-বাজার কুশিয়ারা নদীর ভাঙ্গনে পড়তে পারে। তাই যতদ্রুত সম্ভব নদীর তীরের ব্লকগুলো সংস্কার করা প্রয়োজন। নতুবা এসব এলাকা নদী ভাঙ্গনের ফলে বিলীন হয়ে যেতে পারে। এতে এলাকার সাধারণ জনগন আতংকে রয়েছেন। এসব কাজ দ্রুত সময় করাতে মরহুম সাবেক চেয়ারম্যান এমএ মুছাব্বির চেয়ারম্যানের ছোটভাই শওকত সাহেব অনেক সময় দিচ্ছেন এজন্য তার প্রতি কৃতজ্ঞ।এ বিষয়ে অত্র এলাকার বিশিষ্ট মুরুব্বি ও রাজনীতিবিদ ৯ নং ওয়ার্ড এর ইউপি সদস্য আব্দুল কাদির বলেন, এর আগেও কুশিয়ারা নদী ভাঙনের শিকার হয়ে কদুপুর, বসন্তপুর ও রামপুর  গ্রামের শত শত পরিবার নিঃস্ব হয়েছে। অনেকেই বাড়িঘর হারিয়ে অন্যত্র বসবাস করে আসছেন। নদী তীরবর্তী ফসলের জমি হারিয়ে যাচ্ছে। অসংখ্য গাছপালা চলে গেছে নদী গর্ভে। বর্তমানে নদীর অব্যাহত ভাঙ্গনে আরো অসংখ্য বাড়িঘর ও স্থাপনা বিলীন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই ব্লকগুলো দ্রুত সময়ে সংস্কার করা প্রয়োজন।শরীফগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান এমএ কবির বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড উদাসীনতায় কারনে যে কোন সময় অনেকের বাড়িঘড়, নদির তীরবর্তী রাস্তাঘাট নদী গর্ভে চলে যেতে পারে। এতে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের যাতায়াতে বেপাকে পড়বেন এসব এলাকার লোকজন।