মৃতপ্রায় খালে বিপন্ন জনপদ, দেখার কেউ নেই

দেশসেবা দেশসেবা

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ৩:৪৯ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ৫, ২০২৫
মাজারুল ইসলাম।।  বরিশাল জেলার গৌরনদী ও আগৈলঝাড়া উপজেলার প্রবাহমান ঐতিহ্যবাহী একসময়ের খরস্রোতা   টরকী-বাসাইল খালটি নাব্যতা সংকট দখল ও দূষণে  মৃতপ্রায় আজ। বিপন্ন হচ্ছে এই অঞ্চলের কৃষি, জীবন ও প্রকৃতি।
দীর্ঘদিন খাল খনন না করার কারণে  খাল ও নদীর নাব্যতা সংকটে  নদী থেকে খালে পানি প্রবেশ করছে না।  এছাড়াও  কোন কোন জায়গায় বাধ, অপরিকল্পিত  ব্রিজ নির্মাণ, খালের জায়গা দখল করে কাঁচা পাকা স্থাপনা নির্মাণ, নির্বিচারে ময়লা আবর্জনা ফেলার কারণে খালটটির আজ এই বেহাল অবস্থা।    টরকী-বাসাইল খালটি যা এক সময়  এই অঞ্চলের প্রধান চলাচলের নৌ-পথ ছিলো। রাস্তা পাকা হওয়াতে সড়ক পথে যোগাযোগের জনপ্রিয়তা বাড়ে। দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে  খালটি ধীরে ধীরে নাব্যতা হারিয়ে ফেলে।  যার প্রভাব পড়ে   বোরোধান আবাদের মৌসুমে। বিশেষ করে শীত মৌসুমে খালে মোটেও পানি থাকে না। খালটির পানি সেচের  উপরনির্ভর করে এই অঞ্চলের প্রায় ১৪ হাজার হেক্টর জমির বোরোধান আবাদ।
টরকী-বাসাইল খালে মূলত আড়িয়াল খাঁ নদীর শাখা  পলরদী নদী থেকে পানি প্রবেশ করে। কিন্তু শুষ্ক মৌসুমে নদীর পানির স্তর নিচে নেমে গেলে খালে পানি প্রবেশ করে না।  যার স্থায়ী সমাধান খাল খননের মাধ্যমে  নদী ও খালের নাব্যতা সমন্বয় করা। কিন্তু সেটি না করে নদী ও খালের পানি প্রবেশ মুখে বাদ দিয়ে কৃত্রিম সেচ প্রকল্পের মাধ্যমে নদী থেকে খালে পানি উঠানো হয়।  ইজারার মাধ্যমে স্থানীয় ঠিকাদার সেচ প্রকল্প পরিচালনা করে।  সেচ প্রকল্পের এই পানি কয়েক হাত বদল হয়ে কৃষকদের কিনতে হয় উচ্চমূল্যে। যার ফলস্বরুপ কৃষকেরা ধানচাষে আগ্রহ হারিয়ে  বিকল্প হিসেবে পান চাষ করছে এবং মাছের ঘের করছে যে কারণে দিনদিন কমে যাচ্ছে ধানচাষের জমি পরিমান। অন্যদিকে খালের নাব্যতা সংকটের কারণে বর্ষা মৌসুমে কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে খালগুলো পানিতে টইটুম্বুর হয়ে পানিতে তলিয়ে যায়  পানের বরজ এবং মাছের ঘের।
একদিকে পানির অভাবেও চাষিরা জমি চাষ করতে পারছে না অপরদিকে প্রতি ২০শতাংশ জমি চাষ করতে পানি-সেচ বাবদ ৩শতাংশের ধান দিতে হয়। ধানের দাম কম, সে তুলনায় খরচ বেশি হওয়াতে বর্গাচাষিদের জমি আবাদে অনীহা। এতে করে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে জমি মালিকসহ সাধারণ বর্গাচাষিরা। স্থানীয় জমি মালিক কৃষক বর্গাচাষি সকলেই ভুক্তভোগী।
এছাড়াও এই খালের উপর নির্ভর করে একটা  সময় বিপুল সংখ্যক  মৎস্যজীবী মানুষ তাদের জীবন জীবিকা নির্বাহ করতো।  পাওয়া যেত শতেক  প্রজাতির  দেশীর  মাছ।  খালটি মরে যাওয়ায় দেশীয় প্রজাতির মাছ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে স্থানীয় মানুষেরা।
খালটি স্রোতহীন  হয়ে পড়াতে বদ্ধ পানিতে জন্ম নিচ্ছে ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু সহ পানিবাহিত বিভিন্ন রোগ জীবানু। যা এই অঞ্চলের জনস্থ্যের জন্য হুমকি স্বরূপ।
স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য ছাদের সরদার বলেন,
আমাদের শৈশবে খালটি এত পরিমাণ স্রোত ছিল যে আমরা সাঁতরে এপাড় থেকে ওপাড়ে যেতে পারতাম না। এই খাল থেকে মাছ ধরেই আমরা আমাদের মাছের চাহিদা পূরণ করতাম।  কিন্তু খালটি মরে যাওয়ায় আমাদের মাছও বিলুপ্ত এবং ধান চাষে প্রয়োজনীয় পানিও পাচ্ছি না।
কিন্তু খালটি নিয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি বা থানা কৃষি কর্মকর্তাদের   কোন কার্যকর   উদ্যোগ চোখে পড়েনি।  গণমাধ্যমে এনিয়ে গুরুত্ব সহকারে হাজারও সংবাদ প্রকাশিত হলেও যথাযথ কর্তৃপক্ষের টনক নড়েনি।
গত বোর আবাদের মৌসুমে ভুক্তভোগী কৃষকদের পক্ষ থেকে  বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের বরাবর খালটি খননের উদ্যোগ গ্রহণের আবেদন করা হলেও কোন সাড়া পাওয়া যায়নি। এ ব্যাপারে কৃষি অফিসে যোগাযোগ করা হলে বলা হয় প্রকল্প জমা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কবে নাগাদ বাস্তবায়ন  হবে তার কোন সদুত্তর পাওয়া যায়নি।
কৃষি নির্ভর এই জনপদের  প্রান্তিক মানুষের দাবি,  খালটিকে দখল ও দূষণমুক্ত করে  খননের মাধ্যমে নাব্যতা সংকট  দূর করে পানি প্রবাহ নিশ্চিত করা।