সালথায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন আব্দুল খালেক, দেখার কেউ নাই

দেশসেবা দেশসেবা

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১:৩৮ অপরাহ্ণ, জুন ৪, ২০২৪

মোঃ সাজ্জাদ হোসেন।১৪ বছর ধরে অর্ধেক শরীর প্যারালাইসিস হয়ে আছে ৬০ বছর বয়সী আব্দুল খালেকের। কারো সহযোগিতা ছাড়া হাঁটাচলাও করতে পারেন না তিনি। যেখানে থাকেন সেখানে শুয়ে-বসেই সময় কাটাতে হয় তাকে।

একঝাঁক ভাই-বোন ও দুটি ছেলেসন্তান থাকলেও তার রোগা জীবনের সঙ্গী হননি কেউ।এরই মধ্যে বয়সের ভারে শরীরের অবস্থা বেশি খারাপ হওয়ায় নুয়ে পড়েন তিনি।এমন অবস্থায় অসুস্থ খালেককে গত বৃহস্পতিবার (৩০ মে) সন্ধ্যায় ফরিদপুরের সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে ফেলে রেখে যান স্বজনরা। এরপর টানা চার দিন ওই কার্যালয়ের সামনেই অবস্থান করেন তিনি। খবর পেয়ে ইউএনও তাকে উদ্ধার করে আজ সোমবার (৩ জুন) সকালে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠান।আব্দুল খালেক সালথা উপজেলার ভাওয়াল ইউনিয়নের ভাওয়াল গ্রামের মৃত মজিদ মাতুব্বরের ছেলে। চার ভাই ও তিন বোনের মধ্যে খালেক সবার বড়।

তার দুটি ছেলেসন্তানও রয়েছে। আজ সোমবার সকালে ইউএনও অফিসের সামনে গিয়ে দেখা যায়, বৃদ্ধাশ্রমে পাঠানোর জন্য অসুস্থ খালেককে একটি মাহিন্দ্র গাড়িতে তোলা হচ্ছে।হাঁটা-চলা করতে না পারায় কয়েকজন মিলে তাকে গাড়িতে তুলে দিচ্ছেন।এ সময় আব্দুল খালেক বলেন,

‘আমার পরপর দুই স্ত্রী মারা যায়। দ্বিতীয় স্ত্রী মারা যাওয়ার পর ১৪ বছর আগে প্যারালাইসিস হয়ে আমার এক সাইড অবশ হয়ে যায়। এরপর বসতভিটা যা ছিল তা বিক্রি করে চিকিৎসা করি। এখন আমার কোনো কিছুই নেই।আমার দুটি ছেলে আছে।

তারা বিয়ে করে রাজবাড়ীতে তাদের শ্বশুরবাড়িতে থাকে। আমার কোনো খোঁজখবর রাখে না। আমার ভাই-বোনেরা সবাই আর্থিকভাবে ভালো আছে। তবে তারাও আমার দেখাশোনা করে না। এমন অবস্থায় আমি পাশের আটঘর ইউনিয়নের বিভাগদী গ্রামে শ্বশুরবাড়িতে আশ্রয় নিই। সেখানে দুই বছর থাকার পর শ্বশুরবাড়ির লোকজন বৃহস্পতিবার আমাকে আর রাখবে বলে এখানে ফেলে রেখে যায়।’আব্দুল খালেকের দুই ছেলে আলমগীর মাতুব্বর (৪০) ও কলম মাতুব্বর (৩৫) রাজবাড়ী বসবাস করায় তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। এমনকি তাদের ফোন নম্বর পর্যন্ত পাওয়া যায়নি খালেকের কাছে। তবে জোসনা বেগম নামে খালেকের শ্বশুরবাড়ির এক নারী বলেন, ‘আব্দুল খালেকের ছেলেদের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করেছিলাম, তারা কেউ ওনার দায়িত্ব নিতে চায় না।

ওনার ভাই-বোন সবার বাড়িতেই বিল্ডিং ও জমিজমা আছে। তারাও তার খোঁজখবর নেয় না।’সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আনিছুর রহমান বালী বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আমার অফিসের সামনে একজন বৃদ্ধ লোককে তার স্বজনরা ফেলে রেখে যায়। পরে খোঁজখবর নিয়ে জানতে পারি, তার ছেলেরা শ্বশুরবাড়িতে বসবাস করেন। তিনি তার বসতবাড়ি বিক্রি করে নিঃস্ব হয়ে শ্বশুরবাড়িতে থাকতেন। তবে এখন শ্বশুরবাড়ির লোকজনও তার ব্যয়ভার নিতে নারাজ। তাই শ্বশুরবাড়ির স্বজনরা এখানে ফেলে রেখে গেছেন। পরবর্তীতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের যে বৃদ্ধানিবাস আছে, সেখানে তার থাকার ব্যবস্থা করি।’