ধামইরহাটে আদিবাসী স্বীকৃতির দাবিতে, সান্তাল বিদ্রোহের ১৭০ তম বর্ষপূর্তি পালিত

দেশসেবা দেশসেবা

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ২:১৯ অপরাহ্ণ, জুলাই ১, ২০২৫
ছাইদুল ইসলাম ।।
নওগাঁর ধামইরহাটে নেচে গেয়ে, তীর ধনুক ও ঢাক ঢোল পিটিয়ে পূঁজা আর্চনার মাধ্যমে মহান সান্তাল বিদ্রোহের (হুল) ১৭০ তম বর্ষপূর্তি উদযাপন করেছে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সম্প্রদায়ের নারী ও পুরুষেরা।
 সোমবার (৩০ জুন) বেলা সাড়ে এগারোটার সময় বেনিদুয়ার আশ্রয়ন প্রকল্প এলাকায় জগদল সান্তাল হুল দিবস উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক মেরি মুরমুর সভাপতিত্বে ফিতা কেটে এর উদ্বোধন করেন জাতিস্বত্বা মুক্তিসংগ্রাম পরিষদের সভাপতি ও বাংলাদেশ সান্তাল বাইসির চেয়ারপার্সন এসসি আলবার্ট সরেন।
এদিন সকাল থেকে নারীরা নানান রঙের শাড়ি, মাজায় বিছা, খোপায় বাহারি রঙের ফুল ও শাঁখা সিঁদুর পড়ে হাতে তীর ধনুক আর পুরুষেরা সাদা ধুতি, গায়ে সাদা রঙের গেঞ্জি পড়ে ঢাক ঢোল পিটিয়ে, নেচে গেয়ে মহান সান্তাল বিদ্রোহের (হুল) ১৭০ তম বর্ষপূর্তি উদযাপন করতে দেখা যায়। এসময় বাদ যায়নি শিশুরাও।
এরপর আদিবাসী নারী মঞ্চের আয়োজনে ও ডাসকো ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সম্প্রদায়ের নারী পুরুষ ও শিশুদের অংশগ্রহণে তীরনিক্ষেপ প্রতিযোগিতা ও পদযাত্রা শেষে জগদল আদিবাসী স্কুল ও কলেজ চত্বরে ১৮৫৫-৫৬ খ্রিস্টাব্দের সান্তাল বিদ্রোহ ও বর্তমান প্রেক্ষাপটের উপর আলোচনা সভা করা হয়।
সন্ধ্যায় মিলন মার্ডির পরিচালনায় নজিপুর কুকমু মিউজিক ব্যান্ড ও স্থানীয় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সম্প্রদায়ের শিল্পীদের নিয়ে হুল দিবস বিষয়ক সংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।
আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, সাঁওতাল বিদ্রোহ বা সাঁওতাল হুল হলো ১৯ শতকে ব্রিটিশ ভারতে সংঘটিত একটি ঔপনিবেশিক ও জমিদারি শাসন-বিরোধী আন্দোলন, যাকে সাঁওতাল জনগোষ্ঠী নেতৃত্ব দিয়েছিলো। এর সূচনা হয় ১৮৫৫ সালে পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ ও বিহারের ভাগলপুর জেলায়। ইংরেজ আমলে স্থানীয় জমিদার, মহাজন ও ইংরেজদের রাজস্ব ও কৃষি নীতির বিরুদ্ধে সাঁওতালরা ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন গড়ে তোলে।
তাঁরা আরও বলেন, এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন চার মুরমু ভাই। এঁরা হলেন- সিধু, কানু, চাঁদ ও ভৈরব। ১৭৯৩ সালে বড়লাট (গভর্নর-জেনারেল) লর্ড কর্নওয়ালিসের প্রবর্তিত চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে তাঁদের প্রাচীন স্থানান্তর চাষ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যায়। একারণে ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহের আগে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে সাঁওতালরা বিদ্রোহ গড়ে তোলেন।
প্রধান অতিথি ও কেন্দ্রীয় জামুকার সম্পাদক ডা. ফয়জুল হাকিম বলেন, ‘আদিবাসী জনগোষ্ঠীর জন্য ভারত ও পাকিস্তানের মতো বাংলাদেশও একটি জেলখানা। এখানে আদিবাসীদের পূর্ণ অধিকারকে হরণ করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের সংবিধানে সাঁওতালদের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী হিসেবে নয়, আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতির মধ্য দিয়ে তাঁদের শিল্প ও সংস্কৃতিকে পাঠ্যপুস্তকে লিপিবদ্ধ করতে হবে।’
এ-সময় উপস্থিত ছিলেন, ধামইরহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এটিএম বদিউল আলম, ঢাকা জজ কোর্টের এ্যডভোকেট প্রমিলা টুডু, রাজশাহী বিভাগ হে্কস ইপারের সিনিয়র পার্টনারশিপ কো- অরডিনেটর আ ফ ম রুকুনুল ইসলাম, ডাসকো ফাউন্ডেশনের থ্রাইভ প্রকল্পের ফোকাল পার্সন মদন দাস, পাঁচবিবি ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক সুদর্শন মালো, জগদল আদিবাসী স্কুল ও কলেজের অধ্যক্ষ ইলিয়াস আলমসহ স্থানীয় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সম্প্রদায়ের বাসিন্দারা।