কৃষকের ঘাম ঝরানো পরিশ্রমে উৎপাদিত ফসল থেকে রূপান্তরিত খাদ্য নোয়াখালীতে বছরে অপচয় ২ লক্ষ ২০ হাজার টন।

দেশসেবা দেশসেবা

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ৪:১৪ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ৩১, ২০২৪

মোঃ তাহমিদ মাহতাব হৃদয়।। জাতিসংঘের পরিবেশ বিষয়ক সংস্থা  (UNEP) ২০২১ সালে ফুড ওয়েস্ট ইনডেক্স নামে রিপোর্ট প্রকাশ করে,যাতে বলা হয়েছে বাংলাদেশে বছরে এক কোটি ছয় লাখ টন খাদ্য অপচয় হয়।বাংলাদেশে মাথাপিছু খাদ্য অপচয় বছরে ৬৫ কেজি।ইউনেপের ইনডেক্স এ তথ্য প্রকাশ করে।নোয়াখালী জেলায় মোট জনসংখ্যা ৩৩,৭০,২৫১ জন।(UNEP) এর ইনডেক্স যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে বলা হয়ে বাংলাদেশের মাথাপিছু খাদ্য অপচয় বছরে ৬৫ কেজি।সে অনুযায়ী নোয়াখালীতে বছরে খাদ্য অপচয় হয় ২১৯ কোটি ৬৬ হাজার ৩১৫ কেজি বা ২ লক্ষ ২০ হাজার টন।জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচি প্রকাশিত খাদ্য অপচয় সূচক  এক প্রতিবেদনে ওঠে আসে বিশ্বে প্রতি বছর প্রায় ১০০ কোটি টন খাদ্য অপচয় করছে।এ প্রতিবেদনটি খাদ্য অপচয় নিয়ে এ যাবৎকালের সবচেয়ে বিস্তৃত প্রতিবেদন।প্রতিবেদনে বলা হয়েছে বিশ্বে প্রতি বছর একজন মানুষ বাড়িতে গড়ে ৭৪ কেজি খাবার অপচয় করে।সে অনুযায়ী নোয়াখালী জেলায় প্রতিটি বাড়িতে বছরে মোট খাদ্য অপচয় হয় ২৪৯ কোটি ৩লক্ষ ৯৮ হাজার ৫৭৪ কেজি বা ২ লক্ষ ৫০ হাজর টন (প্রায়)।ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের হর্টিকালচার বিভাগের অধ্যাপক কামরুল  হাসান তিনি বলেছেন উচ্চ আয়ের পরিবার এক মাসে মাথাপিছু ২৬ কেজি খাদ্য অপচয় করে খাদ্য উৎপাদন থেকে শুরু করে ভোক্তা খাদ্য গ্রহন করা পর্যন্ত খাদ্য অপচয় হয়। জমি থেকে খাদ্য সংগ্রহের পর কিছু খাদ্য খাওয়ার অনুপযোগী হয়ে পড়ে এটিও অপচয়।খাদ্য সংগ্রহের পর বাজারজাত করন সেখানেও রয়েছে অপচয়ের একটি বড় অংশ।সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ ব্যবস্থা না থাকার কারনে ব্যবসায়ী পন্য বিক্রির পর যা থেকে যায় সেগুলো ফেলে দেওয়া হয়,আর না হয় রেখে দিলে তা কিছুদিন পর নষ্ট হয়ে যায়।আবার এক জেলা থেকে যখন অন্য জেলায় খাদ্য পরিবহন করা হয় তখন খাদ্যের অপচয় হয়। এফএওর গবেষনায় দেখা গেছে,শষ্যদানা মানে চাল,গম ও ডাল এসব উৎপাদন থেকে মানুষ প্লেট পর্যন্ত আসার আগেই ১৮ শতাংশ অপচয় হয়।ফল আর সবজির ক্ষেত্রে অপচয় হয় ১৭ থেকে ৩২ শতাংশ পর্যন্ত।  খাদ্য উৎপাদন থেকে শুরু করে বাজার জাত করা পর্যন্ত যে অপচয় হয় তাকে ফুড লস বলে।আবার খাবার বাড়িতে ও রেস্তোরা এবং কমিউনিটি সেন্টারে যে খাদ্য অপচয় হয় তাকে ফুড ওয়েস্ট বলে।খাদ্য অপচয় রোধে করনীয় কি?
কেনাকাটায় স্মার্ট হোনঃ স্মার্ট কেনাকাটার ক্ষেত্রে আগে একটি তালিকা তৈরি করুন এবং যা যা আপনার দরকার শুধু সেগুলোই কিনুন। আরেকবার বাজারে গিয়ে কেনাকাটা করার আগে, আগের বার কেনা সব জিনিস ব্যবহারের জন্য একটি পয়েন্ট হিসাব করুন। খাবার সঠিক ভাবে সংরক্ষন করুনঃ খাবার সঠিকভাবে সংরক্ষণ না করলে অনেক বেশি পরিমাণ খাবার অপচয় হয়। অনেকেই জানেন না যে সবজি এবং ফলমূল কিভাবে সংরক্ষণ করতে হয়। এজন্য অনেক সময় ভালোভাবে পাকার আগে কিংবা বেশি পেকে গেলে তারপর সেগুলো সংগ্রহ করা হয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় – আলু, টমেটো, রসুন, শশা এবং পেঁয়াজ কখনোই ফ্রিজে রাখা উচিত নয়। এগুলো ঘরের তাপমাত্রায় রাখা উচিত। পাতাযুক্ত কাণ্ড বা শাক এবং লতানো খাবার পানি দিয়ে রাখতে হবে। রুটি ফ্রিজে রাখা যেতে পারে যদি মনে হয় যে সেগুলো একবারে খেয়ে শেষ করা সম্ভব নয়। সম্ভব হলে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে কেনাকাটা করার চেষ্টা করুন। ফ্রিজের সাথে সখ্যতা গড়ুনঃ খাবার সংরক্ষণের সবচেয়ে সহজ উপায় হচ্ছে তা ফ্রিজে রাখা। আর ফ্রিজে রাখলে ভাল থাকে এমন খাবারের তালিকাও বেশ লম্বা।যেমন, সালাদ হিসেবে যেসব সবুজ সবজি খাওয়া হয় সেগুলো সহজেই ফ্রিজে রাখা যায়। ব্যাগ কিংবা কন্টেইনারে করে এসব সবজি রেখে দিন এবং পরে সেগুলো স্মুদি বা অন্য রেসিপির জন্য ব্যবহার করুন। শাক বা লতানো খাবার অলিভ অয়েল আর টুকরো রসুনে মিশিয়ে বরফ তৈরির ট্রেতে করে সংরক্ষণ করা যায়। যা পরে ভেঁজে খাওয়া যায় বা অন্যান্য খাবার তৈরিতে ব্যবহার করা যায়।অতিরিক্ত খাবার যেমন ফার্মে বেশি পরিমাণে উৎপাদিত কোন খাদ্য পণ্য, স্যুপ বা মরিচের মতো পরিমাণে বেশি হয় এমন খাবারও ফ্রিজে সংরক্ষণ করা যায়।এর মাধ্যমে সব সময় স্বাস্থ্যকর এবং ঘরে রান্না করা খাবারের চাহিদা পূরণও সম্ভব হয়। দুপুরের খাবার বাসা থেকেই নিয়ে যানঃ যদিও সহকর্মীদের সাথে খাবার খেতে বাইরে যাওয়া কিংবা পছন্দের কোন রেস্টুরেন্টে গিয়ে পছন্দের খাবারটি খাওয়া বেশ আনন্দদায়ক, কিন্তু এগুলো বেশ দামি এবং এতে খাবার অপচয়ের সম্ভাবনাও বেশি থাকে। অফিসের মধ্যাহ্নভোজ হিসেবে সাথে করে নিয়ে যাওয়া খাবার অর্থ সাশ্রয় এবং সেই সাথে কার্বন নিঃসরণ কমাতে সহায়তা করেসকালে যদি হাতে সময় কম থাকে, তাহলে আগেই উদ্বৃত্ত খাবার ছোট-ছোট কন্টেইনারে করে ফ্রিজে রেখে সংরক্ষণ করুন।এভাবে, আগে রান্না করা এবং মুখরোচক খাবার মধ্যাহ্নভোজ হিসেবে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রতিদিন সকালে আপনার হাতের কাছেই থাকবে। ছোট পদক্ষেপ, বড় অর্জনঃসবশেষে যেটি বলতে হয় তা হলো, আমরা সবাই চাইলেই খাদ্য অপচয় কমাতে পারি কারণ এর হাজারো রকম উপায় রয়েছে।আপনার বাড়ি থেকে প্রতিদিন যে পরিমাণ খাবার অপচয় হয় সে সম্পর্কে পদক্ষেপ নিয়ে বিশ্বের অন্যতম মূল্যবান এই সম্পদ বাঁচাতে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে আপনি সহায়তা করতে পারেন।আপনার কেনাকাটা, রান্না এবং খাওয়ার বিষয়ে ছোট ছোট পরিবর্তন এনে পরিবেশের উপর চাপ কমানো যেতে পারে। আর এটা তেমন কঠিন কিছুই নয়।ছোট ছোট প্রচেষ্টার মাধ্যমে আপনি আপনার খাদ্য অপচয় বহুলাংশে কমিয়ে আনতে পারেন, অর্থ ও সময় সাশ্রয় করতে পারেন, আর কমাতে পারেন প্রকৃতির উপর থেকে কিছুটা চাপ।