বরগুনায় ইসমাইল শাহ্ র মাজার ভেঙে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে বিক্ষুব্ধ তৌহিদী জনতা

দেশসেবা দেশসেবা

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ৩:১১ অপরাহ্ণ, মার্চ ১৮, ২০২৫

মোঃ শাহজালাল।।

বরগুনার আমতলীতে ইসমাইল শাহ মাজারে বাৎসরিক ওরশ চলাকালে মাজার ভেঙে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে বিক্ষুব্ধ তৌহিদী জনতা। প্রায় দুই ঘন্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রনে এনেছে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। তার আগেই আগুনে মাজারের ভিতরের সামিয়ানা ও দুইটি বৈঠকখানা পুড়ে চাই হয়ে গেছে। এ হামলায় অন্তত ২০জন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। আহতদের কয়েকজনকে আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।আমতলী পৌর শহরের বটতলা এলাকায় রবিবার দিবাগত রাত সোয়া ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটেছে। ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা দুই ঘন্টা চেষ্টা চালিয়ে রাত পৌনে তিনটায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। জানা গেছে, আমতলী পৌর শহরের বটতলা এলাকায় ১৯৯৬ সালে ইসমাইল শাহ এর মাজার স্থাপন করা হয়। ওই সময় থেকে মাজার কর্তৃপক্ষ দুইদিনব্যাপী ওরশ উৎযাপন করে আসছেন। ২৮তম ওরশ গতকাল রবিবার সন্ধ্যায় শুরু হয়। ওইদিন রাতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ আমতলী উপজেলা শাখার সভাপতি মাওলানা ওমর ফারুক জেহাদী ও সাধারণ সম্পাদক গাজী বায়েজিদের নেতৃত্বে তাদের শতাধিক সমর্থক ও তৌহিদী জনতা এসে মাজার কর্তৃপক্ষকে মাজার পুজা ও গান বাজনা বন্ধ করতে বলেন। কিন্তু মাজারের প্রধান খাদেম আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাড. মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল ওরশ বন্ধে অপারগতা প্রকাশ করেন। এ নিয়ে তাদের মধ্য কথাবার্তা চলাকালীন এক পর্যায় তার সমর্থক ও তৌহিদী জনতা লাঠিসোটা নিয়ে মাজারে ভাংচুর চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে ওই ওরশে আসা হাজার হাজার ভক্ত ও স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। মানুষ এদিক ওদিক ছুটাছুটি করতে থাকেন। খবর পেয়ে আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ আশরাফুল আলম, সহকারী কমিশনার (ভূমি) তারেক হাসান ও ওসি মোঃ আরিফুল ইসলাম আরিফ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। এদিকে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা দুই ঘন্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ততক্ষণে মাজারের দুইটি বৈঠকখানা ও মাজারের মধ্যে সামিয়ানা পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এতে অন্তত ২০ জন আহত হয়েছে। আহতদের মধ্যে সোলায়মান (৩৮), রেজাউল (১৮), বাদল মৃধা (৪০), দুলাল মৃধা (৪২), আবু বকর (২৯), আবুল হোসেন (২৮), আব্দুল্লাহ আল নোমান (২৮), মোঃ মামুন (৪৩), আবুল কালাম (৪২), জোবায়ের (১৯) ও ফজলুল করিম (২৭) কে আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। অপর আহতদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডাঃ রাসেদ মাহমুদ রোকনুজ্জামান বলেন, আহতদের যথাযথ চিকিৎসা দিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন বলেন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ আমতলী শাখার সভাপতি ওমর ফারুক জেহাদী ও সাধারণ সম্পাদক গাজী বায়েজিদের নেতৃত্বে শতাধিক তৌহিদী জনতা লাঠিসোঠা নিয়ে এসে মাজার ভাংচুর করে। পরে মাজারে আগুন দেয়। এ সময় ওরশে আসা হাজার হাজার ভক্তবৃন্দ ও স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। আগুন ধাউ ধাউ করে জ্বলতে থাকে। মানুষ দিকবেদিক ছুটাছুটি করতে থাকেন। ইসমাইল শাহ মাজারের প্রধান খাদেম অ্যাডঃ মোস্তাফিজুর রহমান বাবুলের দাবী, মাওলানা ওমর ফারুক জেহাদী ও গাজী বায়েজিদের নেতৃত্বে তাদের শতাধিক সমর্থক লাঠিসোঠা নিয়ে এসে অতর্কিতভাবে মাজারে হামলা চালায় এবং আগুন দেয়। এতে মাজারের ভিতরের গিলাব এবং দুটি বৈঠকখানা পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। তিনি আরো বলেন, তারা ভক্তবৃন্দকে মারধর ও মাজারের বাক্সে থাকা টাকা পয়সা লুটপাট করেছে। তিনি এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি দাবি করেন। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমতলী উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক গাজী বায়েজিদ বলেন, মুফতী মাওলানা ওমর ফারুকসহ আমাদের বেশ কিছু সমর্থক ও তৌহিদী জনতা গিয়ে মাজারের প্রধান খাদেমকে পবিত্র রমজান মাসে মাজার পুজা ও গান-বাজনা করতে নিষেধ করেন। কিন্তু তিনি তা মানতে নারাজ। এক পর্যায় তার ভক্তবৃন্দরা ক্ষিপ্ত হয়ে মাওলানা ওমর ফারুক জেহাদীর গায়ে হাত তুলে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। এতে জনতা ক্ষিপ্ত হয়ে মাজারে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে। আমতলী থানার ওসি মোঃ আরিফুল ইসলাম আরিফ বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। বর্তমানে মাজারটিতে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ আশরাফুল আলম ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে বলেন, ঘটনার সঙ্গে যারাই জড়িত তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। বরগুনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আলম ঘটনাস্থল ইসমাইল শাহ মাজারটি পরিদর্শন করেন। ওই সময় তার সাথে বরগুনা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ জহিরুল ইসলাম, উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ আশরাফুল আলম, সহকারী কমিশনার (ভূমি) তারেক হাসান, ওসি আরিফুল ইসলাম আরিফ ও গণমাধ্যম কর্মীগণ উপস্থিত ছিলেন। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আলম উভয় পক্ষকে ডেকে শান্ত থেকে আইন নিজের হাতে তুলে না নিতে অনুরোধ করেন। এরপরেও যদি কেহ আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার চেষ্টা করে সে যেই হোক কাউকে এক চুল পরিমাণ ছাড় দেওয়া হবে না বলে হুশিয়ার করে দেন।