গোপালগঞ্জে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার: স্বাস্থ্য সেবা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন

দেশসেবা দেশসেবা

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ৩:১০ অপরাহ্ণ, জুলাই ৫, ২০২৫

শেখ ফরিদ আহমেদ ।।

গোপালগঞ্জ জেলার স্বাস্থ্যসেবার প্রধান আশ্রয়স্থল হিসেবে পরিচিত জেলা সদরস্থ গোপালগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। তবে দিন দিন জনগণের মধ্যে প্রশ্ন জাগছে—সেই কাঙ্ক্ষিত সেবা কি আদৌ মিলছে সরকারি এই প্রতিষ্ঠানে?
এই মেডিকেল কলেজকে ঘিরেই গত কয়েক বছরে শহরজুড়ে গজিয়ে উঠেছে অর্ধশতাধিক বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। যেন ব্যাঙের ছাতার মতো ছড়িয়ে পড়েছে একের পর এক প্রতিষ্ঠান। জনমনে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন—সরকারি পর্যায়ে উন্নত চিকিৎসা সুবিধা থাকা সত্ত্বেও কেন মানুষ ছুটছে এসব বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের দিকে?
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অনেক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকই সরকারি দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি নিয়মিত সময় দিচ্ছেন এসব ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিকে। তারা পারিশ্রমিক হিসেবে নিচ্ছেন চুক্তিভিত্তিক সম্মানী কিংবা পরীক্ষার বিপরীতে নির্ধারিত ‘পার্সেন্টেজ’। এতে চিকিৎসা কার্যক্রমে স্বার্থের দ্বন্দ্ব তৈরি হচ্ছে—যার কুফল ভোগ করছে সাধারণ রোগীরা।
বেশিরভাগ ক্লিনিকেই কাজ করছে একটি প্রভাবশালী দালাল চক্র, যারা রোগীদের প্রভাবিত করে পরীক্ষা নিরীক্ষা বা চিকিৎসা নিতে বাধ্য করছে নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠান থেকে। এতে চিকিৎসার মান নয়, বরং কমিশনভিত্তিক বাণিজ্য হয়ে উঠেছে মুখ্য।
অভিযোগ রয়েছে, এইসব ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের প্রায় ৯০ শতাংশই কোনো বৈধ অনুমোদন বা লাইসেন্স ছাড়াই পরিচালিত হচ্ছে। নেই প্রয়োজনীয় চিকিৎসক, দক্ষ নার্স, পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি কিংবা জরুরি ওষুধের সংরক্ষণ। অনেকক্ষেত্রে অপারেশন থিয়েটারগুলোও অপ্রশিক্ষিত কর্মীদের হাতে চলছে, যা রোগীদের জীবনের জন্য চরম ঝুঁকিপূর্ণ।
আরও উদ্বেগজনক বিষয় হলো—বেশিরভাগ ক্লিনিকেই পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন নেই। চিকিৎসা বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় নেই কোনো কার্যকর পরিকল্পনা। এসব বর্জ্য যত্রতত্র ফেলে রাখা হচ্ছে, যা শহরের পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ভুল রিপোর্ট, অতিরিক্ত বিল আদায়, এবং অদক্ষ সনদ বিহিন টেকনিশিয়ানের মাধ্যমে পরীক্ষা নিরীক্ষা  অনুপযুক্ত ল্যাব অপারেশন থিয়েটার যন্ত্র পাতি দিয়ে চালানোর অভিযোগও ব্যাপক হারে পাওয়া যাচ্ছে। অথচ এসব অনিয়ম রোধে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর তেমন কোনো তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না।
সচেতন মহলের মতে, এই অব্যবস্থাপনা ও বাণিজ্যিকীকরণের বিরুদ্ধে এখনই যদি কঠোর পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তবে সামনে গোপালগঞ্জের স্বাস্থ্যব্যবস্থা চরম সংকটে পড়বে।
সাধারণ মানুষের প্রশ্ন—এই অনিয়ম, অবহেলা ও স্বাস্থ্যঝুঁকির দায় কে নেবে? সময় থাকতে যথাযথ প্রশাসনিক হস্তক্ষেপই পারে জনগণের বিশ্বাস পুনরুদ্ধার করতে।