বারবার তাগাদার পরও জবাব দিচ্ছে না স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দেশসেবা দেশসেবা ডেস্ক রিপোর্ট প্রকাশিত: ৩:৩৬ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ৪, ২০২৪ নিজস্ব প্রতিনিধি।বারবার তাগাদা দিয়েও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে কোনও জবাব পাচ্ছে না বলে রাষ্ট্রপতির কাছে দেওয়া বার্ষিক প্রতিবেদনে তুলে ধরেছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৩ সালে পাওয়া অভিযোগুলোর মধ্যে ১২২টি অভিযোগের প্রতিবেদন চাওয়া হয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে। এরমধ্যে ৭১টি অভিযোগ প্রতিবেদনের জন্য অপেক্ষমান রাখা হয়েছে। ২৭টি অভিযোগের বিষয়ে বারবার তাগিদ দেওয়ার পরও কোনও প্রকার উত্তর পাওয়া যায়নি। এছাড়াও প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা, ফিলিস্তিন ও হিরো আলমসহ বিভিন্ন প্রসঙ্গ তুলে ধরা হয় জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের প্রতিবেদনে। গত ৩১ মার্চ রাষ্ট্রপতির কাছে ২০২৩ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনটি হস্তান্তর করা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, অনেক ক্ষেত্রেই কমিশনের আইনি দুর্বলতা রয়েছে। দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে ক্রসফায়ার, গুম, বিনা বিচারে আটক, হেফাজতে নির্যাতনসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। সমালোচকরা বলেন, মানবাধিকার কমিশন এসব গুরুতর অভিযোগ নিয়ে তেমন কোনও পদক্ষেপ গ্রহণ করে না। এ ক্ষেত্রে কমিশনের পক্ষ থেকে আইনি দুর্বলতার কথা বলা হয়। কখনও কখনও যুক্তি দেওয়া হয়, কমিশন সরকারি অন্য যেকোনও সংস্থার বিরুদ্ধে তদন্ত করতে পারলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের মতো ঘটনা ঘটলে সে ক্ষেত্রে তারা শুধু প্রতিবেদন চাইতে পারে। কমিশনের নিজেদের তদন্ত করার সুযোগ নেই। কিন্তু এই সীমাবদ্ধতার মধ্যেও কমিশন আইনানুযায়ী কাজ করে যাচ্ছে। প্রতিবেদন দেওয়ার ক্ষেত্রে কমিশন সরকারকে সময় বেঁধে দিতে পারে। ভুক্তভোগীকে সাময়িক সাহায্যের সুপারিশ করতে পারে। সরকারের কাছ থেকে প্রতিবেদন পাওয়ার পর সন্তুষ্ট না হলে কমিশনের ক্ষমতা প্রয়োগের একটি বড় ক্ষেত্র তৈরি হয়ে যায়। তদুপরি, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে কার্যকর ও স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে হলে প্যারিস নীতিমালার আলোকে একে সংশোধন করা জরুরি। তারপরও কমিশন বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। সেগুলোর মধ্যে সীমান্তে সহিংসতা, রোহিঙ্গা সঙ্কট, হাতকড়া-ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে যুবদল নেতার চিকিৎসা, অস্ত্র উদ্ধারের নামে রিকশাচালককে র্যাবের নির্যাতন, সোনারগাঁওয়ে পুলিশের মারধরে ব্যবসায়ীর মৃত্যুতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে পদক্ষেপ নিতে বলা, গাজীপুরে পুলিশ হেফাজতে ব্যবসায়ীর মৃত্যু, ঝিনাইদহে ঋণের চাপে আত্মহত্যা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পরিচয়ে পল্লী চিকিৎসককে তুলে নিয়ে যাওয়া, যশোর মেডিক্যাল কলেজে অঘোষিত টর্চার সেল, পুলিশের হাতে নির্যাতন ও মুক্তিপণ, ভুয়া ভ্যাকসিন বিক্রি বন্ধকরণে পদক্ষেপ, নারায়ণগঞ্জে র্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ৬৫ বছরের বৃদ্ধ নিহত, কাওরান বাজারে দুই সাংবাদিকের ওপর হামলা, যুগান্তরের ধামরাই প্রতিনিধির ওপর সন্ত্রাসীদের হামলা, শ্রমিক নেতা হত্যার ঘটনায় কমিশনের উদ্যোগ, উড়াল সড়ক থেকে রড পড়ে শিশু মৃত্যুর ঘটনায় মামলা এবং হিরো আলমের ওপর হামলার ঘটনাসহ অনেকগুলো ঘটনায় দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। হিরো আলমের বিষয়ে বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়, ঢাকার গুলশান, বনানী ও ক্যান্টনমেন্ট এলাকা নিয়ে গঠিত ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনের ভোট চলাকালে বেলা সোয়া তিনটার দিকে বনানী বিদ্যানিকেতন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ভোটকেন্দ্র পরিদর্শনে যান হিরো আলম। সেখানে যাওয়ার পর হামলার শিকার হন সংসদ সদস্য প্রার্থী আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলম। কমিশন মনে করে ভোট চলাকালে হিরো আলমের ওপর যে হামলার ঘটনা ঘটেছে তা অত্যন্ত নিন্দনীয়। একইসঙ্গে ঘটনাটি নির্বাচনি আচরণবিধির পরিপন্থি ও মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এ অবস্থায়, সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে অভিযোগে বর্ণিত ঘটনায় জড়িত দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করে কমিশনকে অবহিত করার জন্য ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনারকে বলা হয়। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকেন্দ্রিক সহিংসতার ক্ষেত্রে বলতে গিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, নির্বাচনপূর্ব, নির্বাচনকালীন এবং নির্বাচন পরবর্তী মানবাধিকার পরিস্থিতির বিষয়টি সারা বছর আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল। মানবাধিকার বিষয়ক একমাত্র রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাংলাদেশে আগত বিভিন্ন কূটনীতিক এবং নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা বছরের বিভিন্ন সময় জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে কমিশনের মতামত গ্রহণ করেছেন। গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন সংবাদ পর্যালোচনায় দেখা যায়, বছরজুড়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে নির্বাচনকেন্দ্রিক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। ২৮ অক্টোবর (২০২৩) রাজধানীতে দেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলের সমাবেশকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে ব্যাপক সংঘাতে পুলিশ, গণমাধ্যমকর্মী ও জনসাধারণকে আক্রমণের ঘটনাকে কমিশন অত্যন্ত নিন্দনীয় এবং মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন মর্মে মনে করে। সভা-সমাবেশের নামে জনগণের জান-মালের ওপর আক্রমণ, অগ্নিসংযোগ, প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা চরম নিন্দনীয়। বিশেষত, ফকিরাপুলে বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে দুর্বৃত্তরা একজন পুলিশ সদস্যকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করেছে, যা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। এসব বিষয়ে মঙ্গলবার সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্যেও মানবাধিকার সুরক্ষায় কমিশন নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। মানবাধিকার বিষয়টি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে গণমাধ্যমের নিত্য চর্চার বিষয়। সাংবাদিকদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষায় কমিশন নিবিড়ভাবে কাজ করে থাকে। এ পর্যন্ত দেশের যে প্রান্তেই সাংবাদিক আক্রান্ত হয়েছে, কমিশন সঙ্গে সঙ্গেই কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এছাড়া অন্যান্য অনেক বিষয়ে কমিশন সুয়োমটো অভিযোগ গ্রহণ করে পদক্ষেপ নিয়েছে। SHARES জাতীয় বিষয়: