পোষাক কারখানার আগুন থেকে বাঁচতে হলে যা জানতে হবে

দেশসেবা দেশসেবা

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ৬:১০ অপরাহ্ণ, জুন ৮, ২০২৪

মোঃ  মামুন মোল্লা। বৃহস্পতিবার (৬ জুন) চট্টগ্রাম  ইপিজেডের সেক্টর ৭ নং রোডে অবস্থিত বাংলাদেশের অন্যতম বৃহত্তম রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান প্যাসিফিক জিন্স  লিমিটেড ইউনিট  ২  এক ফায়ার ডিল  মহড়া অনুষ্ঠিত হয় ।

ফায়ার  ডিল মহড়ায় অংশগ্রহণ করেন ইপিজেড থানার ফায়ার স্টেশন অফিসার ও ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তা মোঃ শাহাদাত হোসেন তিনি বলেন,চট্টগ্রাম ভিত্তিক বাংলাদেশের অন্যতম বৃহত্তম রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান প্যাসিফিক জিন্স   গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান প্যাসিফিক ইউনিট ২ । পোশাক কারখানায় আগুন লাগলে শ্রমিকদের করণীয় কি ও জান মালের নিরাপত্তার জন্য এ বিষয়ে আলোচনা করেন ।

পোশাক শিল্প কারখানায় আগুন লাগলে করণীয় :
আগুন লাগলে ভয় পাওয়া যাবে না বা বিচলিত হওয়া যাবে না। আগুন লাগতেই পারে, তবে তা কমপক্ষে ১০/১৫ মিনিট লাগবে ছড়াতে। আর সঠিক ব্যবস্থাপনায় এই সময়ে সব কর্মীদের বের করে আনা সম্ভব। প্রথমে নিশ্চিত হন যে কারখানায় সত্যিই আগুন লাগছে কি না। যদি লেগে থাকে, তবে কোথায় লেগেছে তা ভাল করে জানুন এবং তাড়াহুড়ো না করে আস্তে আস্তে নিকটস্থ সিঁড়ি দিয়ে নীচে নেমে আসুন।
ফায়ার ফাইটিং দলের দায়িত্ব :
১.আগুন লাগার সাইরেন শোনার সঙ্গে সঙ্গে ইলেক্ট্রিশিয়ান/ফায়ার ফাইটিং পার্টির দলনেতা ফ্লোরের বিদ্যুতের মেইন সূইচ অফ করবে।
২.সাইরেন শোনার সঙ্গে সঙ্গে ফায়ার ফাইটিং পার্টির প্রত্যেককে নির্দিষ্ট অগ্নি নির্বাপনি যন্ত্রের কাছে চলে যাবে ও যন্ত্র নামিয়ে নেমে এবং একত্রিত হয়ে আগুন কোথায় লেগেছে তা জানার চেষ্টা বা পরবর্তী নির্দেশের জন্য অপেক্ষা করবে। তবে যদি নিজ ফ্লোরে আগুন লাগে তাহলে দ্রুত আগুনের কাছে যাবে এবং আগুনের দিকে তাক করে অগ্নি নির্বাপনী যন্ত্র ব্যবহার করবে।
৩.ফায়ার ফাইটাররা কে কোনটি অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র ব্যবহার করবে তা পূর্বেই নির্ধারিত থাকবে।
৪.ফায়ার ফাইটাররা প্রয়োজনে সিঁড়ির সামনে রক্ষিত ড্রামের পানি, ফায়ার হোস পাইপের সাহায্যে আগুন নিভাতে চেষ্টা করবে।
৫.বৈদ্যুতিক আগুন নিভাতে শুধুমাত্র কার্বন ডাই অক্সাইড ব্যবহার করবে।
৬.ফায়ার ব্রিগেড দল আসলে তাদেরকে সর্বভাবে সাহায্যে করবে।
৭.দলের সবাই দলনেতার নেতৃত্বে কাজ করবে।
৮.নিজের ফ্লোরে আগুন না লাগলে পি.এম বা কর্তৃপক্ষের পরবর্তী নির্দেশের অপেক্ষায় থাকবে।
আগুন লাগলে চালকদের কতর্ব্য :
১ .ফায়ার সাইরেন শোনার সাথে সাথে নিজ নিজ গাড়ী দ্রুত গেটের বাইরে নিয়ে যাবে। রাস্তার উপরে গাড়ী দাঁড় করে রাখা যাবেনা। ফায়ার ব্রিগেডের গাড়ী সহ অন্য গাড়ী চলাচলে প্রতিবন্ধকতা যেন সৃষ্টি না হয়।
২.ফ্যাক্টরীর ভিতরে গাড়ী পার্কিং-এর সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন গাড়ীর মুখ সামনের দিকে বা বাহির মুখী হয়ে থাকে।
৩.গাড়ী পার্কিংএর সময় খুব প্রয়োজস না হলে হ্যান্ড ব্রেক লাগাবেন না। যাতে প্রয়োজনে ঠেলে গাড়িটি সরানো যায়।
অকেজো গাড়ী এমনভাবে পাকিং করতে হবে যেন সম্ভাব্য অগ্নি ঝুঁকি থেকে দুরে থাকে এবং পথের মাঝখানে না থাকে।
নিরাপত্তাকর্মীদের দায়িত্ব :
১. দর্শনার্থী ভীড় কমানো।
২. অনুপ্রবেশকারীকে প্রতিহত করা
৩. প্রধান রাস্তাটি গাড়ী চলাচলের জন্য উন্মুক্ত রাখা, যাতে ফ্যাক্টরীর লোকজন নির্বিঘ্নে বাসায় গমন করতে পারে এবং ফায়ার ব্রিগেড, এ্যাম্বুলেন্স, পুলিশের গাড়ী চলাচল করতে পারে।
৪. হুড়োহুড়ি হলে পদদলিত হবার সম্ভাবনা থকে। এজন্য যে আগে আছে তাকে আগেই যেতে দিতে হবে। এক্ষেত্রে নিরাপত্তা কর্মীরা গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করতে পারে।
লোক অপসারনে অগ্রাধিকারঃ
জরুরী অবস্থায় আটকে পড়া লোক অপসারণ করার সময় নিচে লেখা অগ্রাধিকার অনুসরণ করা উচিত –
১.শিশু ও সন্তান সম্ভবা মা
২.বৃদ্ধ লোক
৩.মহিলা
৪.অফিস স্টাফ
৫.অফিসার
৬.শাখা প্রধান
৭.নিরাপত্তা কর্মী।
প্রাথমিক চিকিৎসা দলের দায়িত্ব :
দূর্ঘটনায় কেউ আহত হলে তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে দ্রুত ডাক্তারের কাছে পাঠানোর ব্যবস্থা করবে
কারখানা প্রশাসনের দায়িত্ব:
১.আহতদেরকে হাসপাতালে প্রেরন করতে হবে। এ জন্য ১টি এ্যাম্বুলেন্স রেডি থাকবে।
২.অনতিবিলম্বে ফায়ার ব্রিগেডের সহায়তা নিতে হবে
৩. পুলিশের সহায়তা নিতে হবে।
উদ্ধারকারী দলের দায়িত্ব :
অবশ্যই প্রথমে মানুষ এবং পরে মালামাল উদ্ধার করবে। উদ্ধারকারীদল কারখানার সকল ফ্লোরের কর্মীদের সুশৃঙ্খলভাবে কারখানা থেকে বের হতে সাহায্য করবে এবং কারখানার ফ্লোরে কোথাও কেউ আছে কি না ভালভাবে খোঁজ করে দেখবে।
যে সকল বিষয়ে সাবধান থাকতে হবে :
১.ধোয়াঁ শ্বাস-প্রশ্বাসের সংগে ভিতরে নেয়া যাবেনা।
২.কাপড় বা ভেজা রুমাল/গামছা দিয়ে মুখ ঢাকতে হবে।
৩ যদি কাবর্ন ডাই অক্সাইড ব্যবহার করা হয় তবে নাকে বা গলায় ধোঁয়া প্রবেশের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।
৪.সকল দরজা জানালা খুলে দিতে হবে যাতে সব ধোয়াঁ বেরিয়ে যায়।
৫.সবাই এক সঙ্গে বের হবার জন্য দরজার দিকে যাওয়ার সময় তাড়াহুড়া করা যাবেনা।
৬. লাইন ধরে শৃংখলার সহিত বের হতে হবে।
৭.জরুরী নির্গমন পথ অথবা সহজে যাওয়া যায় এমন পথ দিয়ে বের হতে হবে।
যা যা প্রয়োজন:
১.হোসপাইপ ২.গংবেল ৩.ফায়ার সাইরেন ৪.ফায়ার বাকেট ৫.বাকেট স্টেন ৬. ষ্ট্রেচার
৭. ফায়ার হুক ৮.গামবুট ৯. সেইফটি গগলস ১০. ডাস্ট মাস্ক ১১. গ্যাস মাস্ক ১২. হ্যান্ড গ্লোভস
১৩. ফায়ার ব্লাংকেট ১৪. লক কাটার ১৫. ফায়ার বিটার ১৬. ইয়ার মাফ ১৭. স্মোক ডিটেক্টর ১৮. রশি ১৯. এক্সিট লাইট বক্স ২০. ইমারজেন্সী এক্সিট লাইট বক্স ২১. লাঞ্চ বেল ২২. ভিজুয়্যাল ফায়ার এলার্ম ২৩. র্চাজার লাইট ২৪. ফায়ার ইকোয়িপ ২৫.ন্টস বক্স ২৬. টু স্পট লাইট ২৭.রাবাার ম্যাট ২৮. এবোনাইট সীট ২৯.অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র ৩০.অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র (সি.ও.টু) ৩১.নির্দেশিকা ৩২. বোর্ড ৩৩. ধূয়া সনাক্তকারী যন্ত্র
৩৪. এক্সিট সাইন
যেহেতু আগুন উর্ধমুখী, তাই যে তলায় আগুন লেগেছে সে তলার লোক প্রথম নামবে। তারপর তার উপরের তলার লোক নামবে। তারপর ক্রমে ক্রমে নিচতলার দিকে আসবে। দোতালা ও একতালার লোক বের হবে সবশেষে। ইমারজেন্সির সময় লিফ্ট ব্যবহার করা যাবে না।
প্যাসিফিক জিন্স গ্রুপের ইউনিট – ২ সহকারী  পরিচালক সৈয়দ মাহবুব করিম বলেন,আমরা কিছুদিন পর পরই  ফায়ার ডিল মহড়ার ব্যবস্থা করি । যাতে শ্রমিকরা জানমাল নিয়ে বেঁচে যেতে পারে । আগুন লাগলে কোন  শ্রমিক দুর্ঘটনা শিকার না হয় ।এজন্য  শ্রমিকদের  নিরাপত্তার কথা ভেবে ফায়ার ডিল মহড়ায় আগুন নিভানোর ও বেঁচে যাওয়ার  প্রশিক্ষণ দেই ।