ভাঙ্গায় পুর্ব শত্রুতার জের ধরে ২৫টি বাড়িঘর ও দোকানপাট ভাঙচুর-লুটপাট সহ অগ্নিসংযোগ

দেশসেবা দেশসেবা

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১১:৩৫ পূর্বাহ্ণ, এপ্রিল ২৮, ২০২৫

মোঃ রিপন শেখ।।

ফরিদপুরের ভাঙ্গায় পুর্ব শত্রুতা ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দু’দল গ্ৰামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। সংঘর্ষে নারীসহ কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়েছে। সংঘর্ষ চলাকালীন সময়ে দুটি বসতবাড়িতে অগ্নিসংযোগ, কমপক্ষে ১২ টি বাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাট, ১৫ টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর সহ ব্যাপক লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। শনিবার রাত থেকে থেমে থেমে চলা সংঘর্ষ রবিবার (২৭ এপ্রিল) সকাল ১০টা পর্যন্ত চলে।  ঘটনাটি ঘটেছে ভাঙ্গা উপজেলার মানিকদহ ইউনিয়নের পুখুরিয়া রেলস্টেশন সংলগ্ন হাজারি মার্কেট ও খাঁ কান্দা নাজিরপুর গ্রামে। সেনাবাহিনী ও পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সেনাবাহিনী ও পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে আট গ্রামবাসীকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। এলাকায় গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে সেনাবাহিনী ও পুলিশ মোতায়ন রয়েছে।
জানা গেছে, ভাঙ্গা উপজেলার মানিকদহ ইউনিয়নের পুকুরিয়া বাসস্ট্যান্ড ও পুকুরিয়া বাজার বনিক সমিতির আধিপত্য নিয়ে দুই পক্ষের পুর্ব শত্রুতা ছিল। এরমধ্যে এক পক্ষের নেতৃত্ব দেন পুখুরিয়া গ্রামের সুলতান মাতুব্বর, মজিবর তালুকদার ও অপরপক্ষের নেতৃত্ব দেন ব্রাহ্মণকান্দা গ্রামের ইয়াকুব মিয়া, ব্যাংকার কালাম মোল্লা। এই দু’পক্ষ বছর জুড়েই রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে লিপ্ত হয়ে থাকে।  গত শনিবার (২৬ এপ্রিল) সন্ধ্যার পর থেকে দুই পক্ষের উত্তেজনা চরমে পৌঁছায়। শনিবার রাত ১০ টার দিকে ইয়াকুব মিয়ার পক্ষের শতাধিক লোক পুখুরিয়া রেলস্টেশন সংলগ্ন হাজারি মার্কেটের ১৫ টি দোকান কুপিয়ে ক্ষতিসাধন করে। এরপর রাতভর দুই পক্ষের শত শত লোক দেশীয় অস্ত্র ঢাল, সড়কি, নিয়ে সংঘর্ষের প্রস্তুতি নেয়। খবর পেয়ে ভাঙ্গা থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। এর কয়েক ঘণ্টা পর রবিবার (২৭ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে সুলতান মাতুব্বরের পক্ষের শত শত লোক ঢাল, সড়কি, রামদা নিয়ে খাঁ কান্দা নাজিরপুর গ্রামের ইয়াকুব মিয়া ও ব্যাংকার কালাম মোল্লার সমর্থকদের বাড়িঘরে আক্রমণ করে।
এ সময় খাঁ কান্দা নাজিরপুর গ্রামের শাহজাহান সরদারের গরুর ঘর, রান্না ঘর, হায়দার সরদারের দুটি খড়ের গাদা, সাইদুল সরদারের একটি পাটকাঠির গাদায় আগুন ধরিয়ে দেয়। এসময় ১২ টির অধিক বাড়ি ঘরে ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘট।
বাড়ির লোকজনের অভিযোগ, সুলতান মাতুব্বরের কয়েকশত সমর্থক ঢাল, সড়কি ও রামদা নিয়ে এসে রবিবার সকালে এ অগ্নিসংযোগ করেছে। এর পাশাপাশি জহুরুল সরদার, নুরা সরদার, সাইদুল সরদার, তাইজেল সরদার, হায়দার সরদার, বক্কার সরদার, রুমি সরদার, ইয়াদ আলী সরদারের বাড়িসহ-১২ থেকে ১৫টি বাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাট করে।
রবিবার সকালে মাঠ ও রাস্তা দিয়ে হাজার খানেক লোক ঐ এলাকার বাড়ি ঘর ঘিরে ফেলে বাড়ি ভাঙচুর করে। লুটপাট করে টাকা পয়সা, গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগি পর্যন্ত নিয়ে যায়। মহিলা ও শিশুদের মারধর করে।
এ গ্রামের রুমি সরদারের স্ত্রী বলেন আরবি বেগম (২৫) বলেন, আমাকে মেরেছে। হাতে রামদা দিয়ে কোপ দিয়েছে। আমদের ৫ টি গরু ও ইউপি সদস্য মিলন সরদারের ৫ টি গরু লুট করে নিয়ে গিয়েছে।
পুখুরিয়া রেলস্টেশন সংলগ্ন হাজারি মার্কেটের চায়ের দোকানদার মোসলেম  (৭০) বলেন, দুই পক্ষের আগে থেকে বিরোধ চলছিল। শনিবার রাতে ইয়াকুব মিয়ার পক্ষের লোকজন বাজারে এসে সুলতান মাতুব্বরের পক্ষের লোকজনের ১৫ টি দোকান কুপিয়ে যায়। আজ আবার সুলতান মাতুব্বরের পক্ষের লোকজন ইয়াকুব মিয়ার পক্ষের লোকজনের বাড়ি ঘরে হামলা করেছে।
সংঘর্ষ চলাকালীন সময়ে পুকুরিয়া সদরপুর সড়কে বেশ কয়েক ঘন্টা যান চলাচল বন্ধ থাকে।

ভাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ আশরাফ হোসেন বলেন, আধিপত্য বিস্তার নিয়ে এ ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।  সেনাবাহিনী আমাদের সহযোগিতা করছে। ডিবি পুলিশের টিমও কাজ করছে। পরিস্থিতি এখন প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সংঘর্ষ চলাকালীন সময়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে।